রাজবাড়ীতে মধ্যরাতে কলেজছাত্রকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা
রাজবাড়ীতে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কলেজছাত্রকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা ও মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী ভিডিও প্রমাণ সংযুক্ত করে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম আসিফ আহমেদ। ঘটনার সময় তিনি শহরের বিনোদপুর পুলিশ ফাঁড়িতে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার পর তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম রিফায়াত ইবনে রইস আরাফ (১৯)। তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর বাড়ি শহরের নূরপুর গ্রামে। বাবার নাম মো. রইস উদ্দিন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থীর বড় ভাই রিয়াসাত ইবনে রইস শিক্ষাসফরে গিয়েছিলেন। গত রোববার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে শহরের নতুন বাজার মুরগির ফার্ম বাসস্ট্যান্ডে আসেন। ছোট ভাই রিফায়াত তাঁকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাসায় আসার পর দেখেন, বাসস্ট্যান্ডে ল্যাপটপ ও একটি ব্যাগ ফেলে রেখে এসেছেন রিয়াসাত। এরপর রিফায়াত আবার গিয়ে সেটি নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে ইয়াছিন উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় পুলিশ তাঁর গতি রোধ করে। এ সময় এসআই আসিফ আহমেদ, কনস্টেবল জাহাঙ্গীর হোসেন ও সুকান্ত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর তাঁকে ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী’ সাজিয়ে মারধর করেন। জামার কলার ধরে পকেটে কিছু ঢোকানোর চেষ্টা করেন। বাধা দিলে বাড়িতে ফোন করে টাকা আনতে বলেন।
ভোররাতে ওই তিন পুলিশ সদস্য তাঁদের বাড়িতে যান। এ সময় এসআই সাগর পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
ফোন পেয়ে রিফায়াতের পরিবারের সদস্যরা ছুটে আসেন। স্থানীয় আরও কিছু লোক জড়ো হন। এ সময় পুলিশ ঘটনাটি অন্য খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে রিফায়াতকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভোররাতে ওই তিন পুলিশ সদস্য তাঁদের বাড়িতে যান। এ সময় এসআই সাগর ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পরের দিন ওই শিক্ষার্থী পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, ভোররাতে এসআই আসিফ ওই বাড়িতে গিয়েছেন। সঙ্গে আরও দুজন রয়েছেন। সবাই পুলিশের পোশাক পরিহিত। এসআই আসিফ হাতজোড় করে ক্ষমা চাচ্ছেন।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা পেলে পরবর্তী সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এক সপ্তাহ আগে এসআই আসিফ রাজবাড়ীতে যোগদান করেন। এর আগের কর্মস্থলে তিনি এক বছর সাত মাস অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি মানসিক সমস্যায় ছিলেন। আগেও এ ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনার পর রাতেই ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে নিয়ে আসা হয়েছে।