মব জাস্টিস সমাজের ক্যানসারে পরিণত হয়েছে: রিজভী
‘মব জাস্টিস’ সমাজের ক্যানসারে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আগে মব জাস্টিসের কথা শোনেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন এই মব জাস্টিস সমাজের ক্যানসারে পরিণত হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কুপিয়ে, লাঠির আঘাতে ছাত্রদল নেতা সৌম্যকে হত্যা করা হয়েছে। একজন মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে ফজলুল হক হলে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব কারা করছে, সবাই জানে। আজকে অনেকেই বড় বড় কথা বলছেন আর বিএনপির বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন।’
আজ সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিএনপির ‘প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পাথর মেরে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, ‘মিডফোর্ডের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে যুবদল, ছাত্রদলকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, “তাদেরকে এমনি বহিষ্কার নয়, আজীবনের জন্য বহিষ্কার করো।” সঙ্গে সঙ্গে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করলে তাদের কেবল দল থেকেই বহিষ্কার করা হচ্ছে না, বিএনপি নিজেরা মামলা করছে, পুলিশকে বলছে ব্যবস্থা নিতে। এর অনেক প্রমাণ নারায়ণগঞ্জেই আছে। নারায়ণগঞ্জের নেতারা বলতে পারবে সেটা। কিন্তু আজকে ইসলামি লেবাসধারী দু–একটি সংগঠন নতুন কিছু মাসুম বাচ্চাদের দিয়ে কথা বলাচ্ছে। বিএনপি যদি অপরাধের পর কোনো ব্যবস্থা না নিত, অপরাধীদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিত, তাহলে এক কথা ছিল। সেটা তো দিচ্ছে না।’
রিজভী তাঁর বক্তব্যে এনসিপির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের একটি সংগঠন হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে প্রত্যেকের রাজনৈতিক দল করার স্বাধীনতা আছে। আমরা প্রত্যেকের প্রতি শুভেচ্ছা দিই। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের সমালোচনা করব, আবার একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াব। কিন্তু মনে হচ্ছে, কোথাও থেকে নির্দেশিত হয়ে তাঁরা (এনসিপি) বিভিন্ন কথা বলছেন।’
কুমিল্লার মুরাদনগরে গৃহবধূর শ্লীলতাহানির ঘটনায় সরকারের একজন উপদেষ্টাকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ‘একটি ইসলামি দলের ছাত্রসংগঠনের মতো আপনারা বিএনপির নামে লাগামহীন অপপ্রচার করতে কার্পণ্য করছেন না। কুমিল্লার মুরাদনগরে একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীর শ্লীলতাহানি করা হলো। এ ঘটনায় বিএনপির একটি অঙ্গসংগঠনের নাম টেনে আনা হলো। সেই ধারাবাহিকতায় তিনজনকে খুন করা হলো। পরে ওই নারীর স্বামী বলল, ওই মুরাদনগরের একজন উপদেষ্টা আছে সরকারে, তাঁর স্থানীয় কর্মীরাই এই কাজটা করেছেন।’
ইসলামি লেবাসধারী একটি দল আওয়ামী লীগের তাঁবেদারদের এজেন্সি নিয়েছে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চরিত্র তো সবাই জানে—আওয়ামী লীগ মানেই লুটপাট, হানাহানির দল। কিন্তু যারা ইসলামের নামে কথা বলে, তারা ’৮৬-তে শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচনে গিয়েছিল। অথচ তারা তখন বলেছিল, যারা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে, তারা জাতীয় বেঈমান। সেই দলটি এখন তাদের ছাত্রদের দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা শেখ হাসিনার তাঁবেদার শক্তির এজেন্সি নিয়েছে।’
জুলাই অভ্যুত্থানে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবদানের কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘ছাত্রদলের ১৪২ জন নেতা-কর্মী, বিএনপির কর্মী ২৩ জন, রিকশাওয়ালা পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। একটি দল বা একটি শক্তি নয়, ১৬ বছর যারা আন্দোলনে ছিল, তাদের সম্মিলিত শক্তি ও ছাত্র–জনতা মিলে শেখ হাসিনার মতো ঘাতককে বাংলাদেশ থেকে বিদায় করা হয়েছে।’
রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাছির উদ্দিন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক ওরফে খোকন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির পক্ষ থেকে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দেওয়া হয়। পরে রুহুল কবির রিজভী বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।