কুড়িগ্রামের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার ভুটানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা সেতুর পূর্ব পাশে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ড্রোনে নির্ধারিত স্থানের তোলা ছবিছবি: সংগৃহীত

ছোট-বড় অর্ধশতাধিক নদ-নদী ও চার শতাধিক দ্বীপচর নিয়ে উত্তরের সীমান্তবর্তী জনপদ কুড়িগ্রাম। প্রতিবছর বন্যা, খরা ও নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে এখানকার মানুষকে টিকে থাকতে হয়। বড় কোনো শিল্পকারখানা নেই বলে এই অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। তবে এবার সেখানে খুলছে সম্ভাবনার দুয়ার।

বাংলাদেশ-ভুটানে যৌথ উদ্যোগে ২৪ লাখ মানুষের জেলা কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপিত হলে এই জেলায় দারিদ্র্যের হার কমবে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক ও ব্যবসায়ীরা।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রামে প্রস্তাবিত এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনে আসবেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক। পরে তিনি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারত হয়ে থিম্পু যাবেন। সম্প্রতি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কুড়িগ্রাম সফরে এসে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ভুটানকে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে ভুটান বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির উদ্যোগ নেয়। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা নদীর পূর্ব পাড়ে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাশে চর মাধবরাম গ্রামে ১৩৩ দশমিক ৯২ একর জমি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য বেজার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ জন্য আরও ৮৬ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে ভুটানের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। ফলে এই পথে পণ্য নিয়ে সহজে যাতায়াত করা যাবে। এ ছাড়া জেলার চিলমারী নৌবন্দরের কার্যক্রম এর সঙ্গে যুক্ত করে এই বিশেষ অঞ্চলকে আরও গতিশীল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তা ও কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, নদীভাঙন ও বেকারত্ব কুড়িগ্রামের অন্যতম বড় সমস্যা। জেলায় শিল্পাঞ্চল গড়ে না ওঠায় দিন দিন বেকারত্ব বাড়ছে। কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে ও জীবনযাত্রার মান বাড়বে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলায় ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু লোকসানের কারণে ২০১১ সালে মিলটি বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর জেলায় সেভাবে কোনো কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। ২০১৫ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ধরলা নদীর পাড় ঘেঁষে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে বিশেষ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল।

কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, জেলার অনেক মানুষ ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে শ্রমিকের কাজ করেন। কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে উৎপাদিত পণ্য যেমন দেশ ও দেশের বাইরে রপ্তানি করা সহজ হবে, তেমনি কম বেতনে পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যাবে। ফলে ছোট শিল্পোদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও ভুটানের সঙ্গে তাঁদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নত হবে।

কুড়িগ্রাম জেলার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তিনটি প্রদেশের সংযোগ আছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, সোনাহাট স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌবন্দরের সঙ্গে ভুটানে যোগাযোগের সুবিধা আছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠায় স্থলবন্দর ও নদীবন্দরের বিষয়টি মাথায় রেখে জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে। এখানে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে কুড়িগ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান হবে, দারিদ্র্য কমে যাবে, মানুষের সক্ষমতা বাড়বে।