জুড়ীতে উন্নত জাতের আরও ১২টি জাম্বুরার সন্ধান, ১টি বীজহীন

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় সম্প্রতি কৃষি বিভাগ অনুসন্ধান চালিয়ে ১২টি উন্নত জাতের জাম্বুরার সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে কলম পদ্ধতিতে দুটি জাতের চারা উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছেছবি. প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি অনুসন্ধান চালিয়ে আরও ১২টি উন্নত জাতের জাম্বুরার সন্ধান পেয়েছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে আপাতত উন্নত দুটি জাতের চারা উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকেরা বেশি লাভবান হবেন বলে দাবি কৃষিবিদদের। দুটির মধ্যে একটি জাতের জাম্বুরা বীজহীন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান প্রথম আলোকে জানান, সম্প্রতি অনুসন্ধানের সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁরা বেশ কিছু জাতের জাম্বুরা সংগ্রহ করা হয়। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে ফলের রং, পাল্প (ফলের ভেতরে খাবারের আঁশযুক্ত নরম অংশ) সহজে উঠে কি না, মিষ্টতা ও রসের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ১২টি জাতকে উন্নত চিহ্নিত করা হয়। একটি জাত বীজহীন পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

১২টির মধ্যে আপাতত দুটি জাত কলম পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা হবে। এ বিষয়ে পাশের কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত কৃষি বিভাগের হর্টিকালচার সেন্টারের দায়িত্বে থাকা লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে। চারা হলে তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণের পাশাপাশি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন টিলাভূমিতে প্রাচীনকালে জাম্বুরা চাষের প্রচলন শুরু হয়। বর্তমানে ৬৬ হেক্টর ভূমিতে এ ফলের আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে গোয়ালবাড়ী ও পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নে বেশি। সেখানে লোকজন বিভিন্ন জাতের লেবু, মাল্টা ও কমলার পাশাপাশি জাম্বুরার আবাদ করে থাকেন। প্রতিবছর মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ১২ টন জাম্বুরা উৎপাদিত হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তা পাইকারি বিক্রি হয়। কিন্তু জাত উন্নত না হওয়ায় কৃষকেরা সব ফলের ভালো দাম পান না। এতে বাণিজ্যিকভাবে তাঁরা লোকসানে পড়েন। কৃষকেরা বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে থাকেন। একই ফলের বীজে আবার বিভিন্ন জাতের চারা হয়।

এ অবস্থায় উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয়। গত ২৭ ও ২৮ আগস্ট এবং ২ সেপ্টেম্বর কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপজেলার গোয়ালবাড়ী ও পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে উন্নত জাতের জাম্বুরার অনুসন্ধান চালান। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে জাম্বুরাগাছে ফুল ধরতে শুরু করে। ফল ধরে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে।

এর আগে ২০২২ সালের দিকে ‘লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদনবৃদ্ধি প্রকল্পের’ আওতায় অনুসন্ধান চালিয়ে ‘জুড়ী বাতাবিলেবু-১’ ও ‘জুড়ী বাতাবিলেবু-২’ নামে এখানকার দুটি জাতের জাম্বুরা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কলম পদ্ধতিতে দুটি জাতের প্রায় চার হাজার চারা উৎপাদন করে প্রকল্পভুক্ত ১২৭টি উপজেলায় তা সম্প্রসারণ ও প্রদর্শনী করা হয়। ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘জুড়ীর জাম্বুরা ছড়িয়ে গেল দেশে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান বলেন, একসময় কমলা চাষে জুড়ীর সুখ্যাতি ছিল। সে অবস্থা এখন আর নেই। ভালো দাম না পাওয়া, রোগবালাই, পোকার আক্রমণ ও বাজারজাতকরণে নানা সমস্যার কারণে কমলা ছেড়ে কৃষকেরা জাম্বুরায় ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু এখানকার সব জাম্বুরা আদিম জাতের। জাত আলাদা না থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলেনি। কৃষকদের মধ্যে উন্নত জাত সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। বিক্রির সময়ও ভালো দাম পান না। জুড়ীর জাম্বুরা চাষে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হয় না দাবি করে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে উঠে, ফুল-ফল ধরে। তাই এ জাম্বুরা বিষমুক্ত বলা যায়।

জাম্বুরার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এটি ভিটামিন ‘সি’, বিটা ক্যারোটিন আর ভিটামিন ‘বি’সমৃদ্ধ। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি যথেষ্ট উপকারী। এই ফলে লিমোনোয়েড নামের একধরনের উপকরণ রয়েছে, যা ক্যানসারের জীবাণু ধ্বংস করে। জাম্বুরার রস শরীরের বাড়তি চর্বিকে ভেঙে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

কৃষি বিভাগের জাত বাছাইয়ের উদ্যোগকে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের জাম্বুরাচাষি সুরুজ আলী, আবদুল মান্নান ও ছুরকুম আলী জানান, বংশপরম্পরায় জাম্বুরার চাষ করছেন তাঁরা। জাত সম্পর্কে তাঁদের আগে কোনো ধারণা ছিল না। এখন প্রতিটি জাম্বুরা গড়ে চার-পাঁচ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। উন্নত জাতের চারা পেলে তাঁরা ব্যাপকভাবে জাম্বুরা চাষে উদ্যোগী হবেন। দামও তখন ভালো পাবেন বলে আশা করছেন।