মুন্সিগঞ্জে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবির ঘটনায় অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে মামলা

নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে পানির তলদেশে গিয়ে খোঁজ করছেন ডুবরিরা। রোববার সকাল ১০টার দিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার রসকাঠি এলাকায়
ছবি : প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে হতাহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে লৌহজং থানায় করা মামলাটির বাদী ট্রলারডুবিতে সন্তানসহ পাঁচ স্বজন হারানো রুবেল শেখ নামের এক ব্যক্তি। মামলায় অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় আসামি করা হয়েছে বাল্কহেডের মালিক, চালক, চালকের সহকারীসহ পাঁচজনকে। সবাই অজ্ঞাতনামা। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নৌ পুলিশকে। প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন।

গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে ৪৬ জন যাত্রী নিয়ে লৌহজং উপজেলার রসকাটি এলাকায় বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনই মামলার বাদীর স্বজন। তাঁরা হলেন পপি আক্তার (২৮), এপি আক্তার (২৮) ও পপির দুই ছেলে সাকিবুল (১০), সজিবুল (৪)। মৃত অন্যরা হলেন মোকছেদা বেগম (৪০), হুমায়ারা (৫ মাস), ফারিয়ান (৮)। এ ছাড়া নিখোঁজ তিন শিশু। তারা হলো মাহির (১১), তুরান (৮) ও নাভা (৫)। এর মধ্যে মাহির মামলার বাদী রুবেল শেখের ছেলে।

এর আগে শনিবার রাতে ফায়ার সার্ভিস থেকে জানানো হয়েছিল ট্রলারডুবির ঘটনায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ পাঁচজন। পরে পুলিশ যাচাই-বাছাই করে জানায়, ট্রলারডুবির ঘটনায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ তিনজন। তাদের নাম-পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএর সদস্যরা আজ বেলা ১১টার দিকে ডুবে যাওয়া স্থান থেকে এয়ার লিফন্টিং ব্যাগ, ক্রেন বোটের সাহায্যে ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়।

সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে চলছে মাতম। পুরো গ্রাম স্তব্ধ অবস্থা বিরাজ করছে। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের দাবি, নিষিদ্ধ বাল্কহেড চলাচলের কারণেই তাঁরা স্বজন হারিয়েছেন। বাল্কহেড রাতের আঁধারে যদি না চলত, তাহলে হয়তো এ ঘটনা ঘটত না।

আরও পড়ুন

গতকাল শনিবার সকালে সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামের নারী-শিশুসহ ৪৬ ব্যক্তি ট্রলার দিয়ে পদ্মা নদীতে পিকনিকে যায়। পিকনিক শেষে ট্রলারটি তালতলা-গৌরগঞ্জ খাল দিয়ে লতব্দির দিকে যাচ্ছিল। রাত আটটার দিকে ট্রলারটি লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় পৌঁছালে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি পানিতে তলিয়ে যায়। রাতেই উদ্ধার অভিযানে নামেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা।

ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর রিপন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরাকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।