ঈদের এই ছুটিতে চট্টগ্রামের যেখানে বেড়াবেন

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাফাইল ছবি

চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা সৈকতে গেলেই বদলে যাবে মনমেজাজ। বিকেলের নরম রোদ আর সৈকতের পাড় ধরে হেঁটে চলার অনুভূতি শহরের অন্য কোথাও মেলে না। সৈকতে হাঁটার প্রশস্ত রাস্তা, বসার জায়গা, ফুডকোর্ট—সবই আছে আধুনিক রূপে। এ কারণেই প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে হাজারো দর্শনার্থীর ভিড় জমে সৈকতে। এবারও পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে যেতে পারেন সৈকতে।

এই পুরোনো শহরের পথে পথে পাহাড়। পা বাড়ালেই সমুদ্র। ফলে একঘেয়েমি দূর করে যাঁরা সময়টা রাঙাতে চান, তাঁরা যেতে পারেন নগরের ফয়’স লেক, ডিসি পার্ক, ভাটিয়ারী হ্রদ, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, স্বাধীনতা পার্ক কিংবা পারকি সৈকতে। ছুটে যেতে পারেন গহিন পাহাড়েও। শহরের অদূরে কাপ্তাই হ্রদে গিয়ে কাটাতে পারেন অনন্য মুহূর্ত।

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত
ফাইল ছবি

ঢেউয়ের গর্জন

শহরের দক্ষিণ প্রান্ত যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু হয় সমুদ্রের ‘জগৎ’। সৈকতে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালেই যেন ছুঁয়ে ফেলা যায় ঢেউ। বিস্তীর্ণ সৈকতজুড়ে কাঁকড়া ফ্রাইয়ের গন্ধে বাতাসের মাখামাখি, ঝালমুড়ির ঠোঙায় লেগে থাকা মসলার ঘ্রাণ আর ঢেউয়ের গর্জন—এই মিলনমেলা যেন বাড়তি আনন্দ এনে দেয়।

পতেঙ্গায় যেতে পারেন দুই রকম পথে। মুরাদপুর থেকে আগ্রাবাদ হয়ে বন্দর, ইপিজেড পেরিয়ে এক সোজা সড়কে পৌঁছানো যায় সৈকতের ধারে। আবার হালিশহর বা ফৌজদারহাট ঘুরে নতুন মেরিন ড্রাইভ ধরে যেতে যেতে পাশ দিয়ে দেখা যাবে সাগরের টলটলে জলরেখা—যেখানে ঢেউ আর পাথরের মিতালি জমেছে চুপিচুপি।

শহরের বিপরীত প্রান্তে, উত্তরের ভাটিয়ারীতে আছে আরও এক অপূর্ব জায়গা—সান সেট পয়েন্ট। পাহাড় আর হ্রদ মিলে তৈরি এক ছবির মতো প্রাকৃতিক দৃশ্য। বিকেলে, সূর্য যখন ধীরে ধীরে অস্ত যায়, লালচে আলো পাহাড়ের গায়ে ছায়া ফেলে, তখন ভাটিয়ারীতে দাঁড়িয়ে মনে হয়, এ দৃশ্যের জন্যই বুঝি ঈদের ছুটি!

অ্যামিউজমেন্ট পার্ক

পাহাড়ের সবুজ ছায়ায় হারিয়ে যেতে চান কিংবা হ্রদের জলে নৌকা ভাসিয়ে কাটাতে চান এক দুপুর—তাহলে নগরের ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক হতে পারে ঈদের ছুটির ঠিকানা। এই বিনোদনকেন্দ্রের সবচেয়ে বড় চমক এখন ‘বেজক্যাম্প’। এখানে রয়েছে নানা ধরনের অ্যাডভেঞ্চার; গাছের মাথায় দড়ির পথ ধরে হাঁটা ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি, মাটিতে ছড়িয়ে থাকা অন গ্রাউন্ড গেম, দল বেঁধে খেলার টিম বিল্ডিং গেম, আর হ্রদের জলে কায়াকিং। প্রতিটি আয়োজনেই আছে রোমাঞ্চ আর আনন্দের পরিপূর্ণতা।

এবারের ঈদ উপলক্ষে শিশু-কিশোর থেকে তরুণদের জন্য একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। আজ ঈদ উপলক্ষে বেলা দুইটায় পার্কের দুয়ার খুলবে। এরপর বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, পাইরেট শিপ, ফেরিস হুইলসহ আরও অনেক রাইডে মেতে উঠতে পারবেন শিশু-কিশোরেরা। আরও রয়েছে হ্যাপি জাম্প, পনি অ্যাডভেঞ্চার, বেবি ড্রাগন, সার্কাস ট্রেন, বাম্পার বোটসের মতো রাইডস।

কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে হাজারো দর্শনার্থী সময় কাটাতে আসেন ফয়’স লেক ও সি ওয়ার্ল্ড ওয়াটার পার্কে। তাই ঈদকে ঘিরে থাকছে নানা আয়োজন, থাকছে নানা প্যাকেজও।’

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সি ওয়ার্ল্ড ওয়াটার পার্কের কৃত্রিম ঢেউয়ের জোয়ারে ভাসতে থাকছে বিভিন্ন ওয়াটার রাইড। যেমন ওয়েভ পুল, মাল্টিস্লাইড, ড্যান্সিং জোন।

ফয়’সলেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

বাঘশাবকের দৌড়ঝাঁপ কিংবা পাখির কিচিরমিচির ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ করে দিতে পারে। এ জন্য পাহাড়ের বুকে লেপটে থাকা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা যেন এখন উৎসবের চেহারায়।

পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ওপরে উঠলেই চোখে পড়বে বাঘ, সিংহ, হরিণ, ময়ূর, কুমিরসহ নানা রকম প্রাণী। প্রায় ৭০ প্রজাতির ৫২০টি পশুপাখি এই চিড়িয়াখানায় আছে।

চিড়িয়াখানার কিউরেটর মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের সময় দর্শনার্থীদের ঢল নামে। এ জন্য সাজসজ্জা ও পরিচ্ছন্নতায় বাড়তি নজর রাখা হয়েছে। পরিবার নিয়ে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যের ঘুরতে পারবেন। চিড়িয়াখানায় টিকিটের দাম রাখা হয়েছে মাত্র ৭০ টাকা।

ঘুরে আসুন পারকি সৈকতে

আনোয়ারা উপজেলার ঝাউবনে ঘেরা পারকি সৈকত গত কয়েক দশকে পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় অনেকে পারকি ভ্রমণে যেতে চাইতেন না। একসময় নগর থেকে দীর্ঘ পথ ঘুরে পৌঁছাতে হতো এ সৈকতে। এখন দৃশ্যপট পাল্টেছে। কর্ণফুলী টানেল চালু হওয়ার পর এখন এক টানেই যাওয়া যায় সৈকতে। তাই বেড়ানোর তালিকায় রাখতে পারেন পারকির নাম। বাঁ দিকের ঝাউবন, ডান দিকে লোনাপানির ঢেউ—এই সমুদ্রসৈকতের মোহনায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার মজাই আলাদা। হেঁটে হেঁটে যেতে পারেন দীর্ঘ পাড় ধরে। সমুদ্রপাড়ে বসে ঝালমুড়ি খেতে খেতে শোনা যাবে ঢেউয়ের ছন্দ।

এখানে রয়েছে বসার ছায়াঘেরা জায়গা। আছে বাহারি খাবারের আয়োজন—শুঁটকি থেকে শুরু করে তাজা মাছের ভর্তা, কাঁকড়া ফ্রাই কিংবা নারকেলের পানি।

আরও দূরে যেতে চাইলে

হাতে একটু বাড়তি সময় থাকলে শহরের বাইরে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। যেতে পারেন বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, ফটিকছড়ির হাজারী খিল অভয়ারণ্য, সুপ্তধারা ঝরনা, সহস্রধারা ঝরনা, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, মহামায়া লেক, নাপিত্তাছড়া ট্রেইল, খৈয়াছড়া ঝরনাসহ আশপাশের পর্যটন এলাকাগুলোয়।

অবসরে ঘুরে বেড়ানো নিয়ে কথা হয় এভারেস্ট, লোৎসে, অন্নপূর্ণাসহ একাধিক পর্বতে আরহোণকারী বাবর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, কোথাও বেড়াতে গেলে মনটা সতেজ হয়। দূর হয় একঘেয়েমি। এ ছাড়া ভ্রমণের মাধ্যমে মনের মধ্যে নতুন প্রাণশক্তির সঞ্চার হয়। তাই তিনিও ঘুরে বেড়ান।