দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা অদম্য মেধাবী শান্তা লক্ষ্য পূরণে অবিচল

শান্তা ইসলাম এবার এসএসসি পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

রফিক ফকির ছিলেন পাটকলের শ্রমিক। কিন্তু সরকার পাটকলটি বন্ধ করে দেওয়ায় কাজ হারান তিনি। উপায়ন্তর না পেয়ে শুরু করেন দিনমজুরের কাজ। কিন্তু সেটিও প্রতিদিন পাওয়া যেত না। তাই দারিদ্র্যের নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। কিন্তু এর মধ্যেও পরিবারের খরচ জুগিয়ে মেয়েকে পড়াশোনা করান তিনি। মেয়েও তার প্রতিদান দেয়। এ বছর যশোরের অভয়নগর উপজেলার অভয়নগর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে রফিক ফকিরের মেয়ে শান্তা ইসলাম। শান্তাদের বাড়ি উপজেলার বাণীপুর গ্রামে।

সম্প্রতি শান্তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ইটের তৈরি দুই কক্ষের ছোট একটি ঘর। ওপরে টিনের ছাউনি। পাশে টিন দিয়ে ছাওয়া ছোট্ট একটি রান্নাঘর। এর মধ্যেই চলছে তাদের সংসার।

শান্তা ইসলামের ইচ্ছা, উচ্চশিক্ষা শেষে সে ব্যাংকার হবে। তার বাবাও মেয়ের এই স্বপ্ন পূরণ করতে চান। এ জন্য স্বল্প আয় দিয়ে মেয়েকে ভালো একটি কলেজে পড়াতে চান রফিক ফকির। তিনি বলেন, ‘আমি দিনমজুরের কাজ করি। প্রতিদিন কাজ হয় না। কাজ হলে দিনে ৩০০ টাকা পাই। এই টাকায় সংসার ঠিকমতো চলে না। মেয়েটা ব্যাংকার হতে চায়। সে জন্য একটা ভালো কলেজে ওকে পড়ানো দরকার। শেষ পর্যন্ত সেটা সম্ভব হবে কি না জানি না। দিনমজুরির টাকা দিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি চেষ্টা করে যাব।’

শান্তা ইসলাম বলে, ‘আমি ব্যাংকার হতে চাই। এ জন্য একটা ভালো কলেজে ভর্তি হতে চাই। প্রয়োজনে টিউশনি করে ব্যাংকার হতে শেষ চেষ্টা করে যাব।’

শান্তার মা হিরা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে এ পর্যন্ত এসেছেন তাঁরা। কষ্ট করে হলেও মেয়েকে পড়াবেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভাবের সংসার। সহায়–সম্পদ বলতে কিছুই নেই। শাশুড়ি তাঁর বাবার কাছ থেকে ৯ শতক জমি পেয়েছিলেন। সেই জমির ওপর বাড়ি করে থাকি। মেয়ের পড়ালেখার ব্যয় অনেক। শান্তা ব্যাংকার হতে চায়। মেয়েটাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা। কষ্ট করে হলেও ওকে পড়াব।’

অভয়নগর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিত কুমার পাল বলেন, ‘শান্তা মেধাবী ছাত্রী। তার আচার-আচরণও খুব ভালো। পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র হওয়ায় আমরা প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে সাধ্যমতো সহায়তা করেছি। আমার বিশ্বাস, একটু সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে সে অনেক ভালো করবে।’

আরও পড়ুন