সিলেটের ৬ থানায় ১২ দিনে ১৭ মামলা, বিএনপির নেতা–কর্মীরা বাড়িছাড়া

মূলত গত ২৯ অক্টোবর বিএনপির সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের পর থেকে সিলেটের বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে

সিলেট জেলার মানচিত্র

১২ দিনের ব্যবধানে সিলেট মহানগরে বিএনপির ৫৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া মহানগরের ৬ থানায় ১৭টি মামলা করা হয়েছে।

এসব মামলায় আসামি আছেন প্রায় ১ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে এজাহারে নাম আছে ৩৮৬ জনের, বাকিরা অজ্ঞাতনামা হিসেবে। দুটি বাদে সব কটি মামলাই করেছে পুলিশ।

বিএনপির মাঠপর্যায়ের দুজন নেতা বলেন, মূলত গত ২৯ অক্টোবর বিএনপির সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের পর থেকে সিলেটের বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। এরই মধ্যে হরতাল ও অবরোধ চলাকালে সহিংসতার অভিযোগ এনে পুলিশ বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। প্রতিদিন রাতে পুলিশ গ্রেপ্তারে অভিযান চালানোয় অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন।

বিএনপির দাবি, পুলিশ মামলার অজুহাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে রাতে তল্লাশি চালাচ্ছে। অজ্ঞাতনামা আসামি অসংখ্য থাকায় নেতা-কর্মীদের অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়িছাড়া হয়ে পড়েছেন। মূলত একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে আর বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ বাড়াতেই পুলিশ এমনটা করছে। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি না হওয়া সত্ত্বেও গণহারে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর নামে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে।

বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাবু করতে গ্রেপ্তারের নামে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। 
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, সভাপতি, সিলেট বিএনপি 

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান বলেন, ‘আমি মামলার আসামি কি না, জানি না। হরতাল-অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায়ই বাড়িতে পুলিশ আসে। একে তো আমি খুবই অসুস্থ মানুষ, এর মধ্যে খেতে পাকা ধান। পুলিশের আতঙ্কে বাড়িছাড়া হওয়ায় খেতের ফসল ঘরে তুলতে পারছি না। এ ছাড়া দেখভাল না করায় এরই মধ্যে শর্ষে ও সূর্যমুখী ফুলের বাগানের চারা গবাদিপশু নষ্ট করে ফেলেছে। আট সদস্যের পরিবার আমি চালাই। অথচ আমিই এখন ঘরছাড়া!’

মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবরের পর গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেট মহানগরে হরতাল-অবরোধ চলাকালে ৪টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি ৬টি গাড়ি অবরোধ-সমর্থকেরা ভাঙচুর করেছেন। সহিংসতা থামাতে গিয়ে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। গ্রেপ্তার হওয়া ৫৪ জনের মধ্যে ২৩ জন পদবিধারী নেতা রয়েছেন। এঁদের মধ্যে বিএনপির নেতা ২১ এবং জামায়াতের নেতা ২ জন। 

একই সূত্রে জানা গেছে, দায়ের হওয়া ১৭টি মামলার মধ্যে অবরোধ চলাকালে গাড়ি ভাঙচুর করায় দুজন ব্যক্তি ২টি মামলা করেন। বাকি মামলাগুলো পুলিশ করেছে। মামলাগুলোর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় ৫টি, জালালাবাদ থানায় ১টি, বিমানবন্দর থানায় ১টি, দক্ষিণ সুরমা থানায় ৬টি, শাহপরান থানায় ১টি এবং মোগলাবাজার থানায় ৩টি দায়ের হয়েছে।

বিএনপির ডাকা হরতালের দিন থেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়িছাড়া হন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কোহিনুর আহমদ। তাঁর মেয়ে কাকন আহমেদ জানান, পুলিশ এক দফা তাঁদের গ্রামের বাড়ি খালেরপাড়ে আসে। এ অবস্থায় মা, ভাইদের নিয়ে তাঁরা নানাবাড়ি সিলাম টিল্লাপাড়ায় অবস্থান নেন। সেখানেও তাঁর বাবার খোঁজ করতে পুলিশ যায়। তাই পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে আছেন।

বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী জানান, পুলিশের অব্যাহত অভিযানের কারণে হাজারো নেতা-কর্মী ঘরের বাইরে বিভিন্ন স্থানে থাকছেন। অনেকে গ্রামাঞ্চলে আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি চলে গেছেন। অনেকে আতঙ্কে মুঠোফোন বন্ধ রেখেছেন। গ্রেপ্তারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও পুলিশ ভীতি তৈরি করতে তল্লাশি চালাচ্ছে প্রতি রাতেই। মূলত কর্মসূচি সফল করতে নেতা-কর্মীরা যেন মাঠে নামতে না পারেন, সে জন্যই পুলিশ তৎপর আছে। তবে পালিয়ে থেকেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা দিনের বেলা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবরোধ কর্মসূচি সফল করছেন।

জানতে চাইলে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, হরতাল-অবরোধে কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই পুলিশ মামলা দিয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাবু করতে গ্রেপ্তারের নামে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। 

বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারেই কেবল অভিযান চালাচ্ছে। কোনো নিরীহ বা নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হচ্ছে না। বিএনপি যে দাবি করছে, সেটা সঠিক নয়। ভয়ভীতি বা আতঙ্ক তৈরি করা পুলিশের কাজ নয়। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তৎপর আছে।