চুয়াডাঙ্গায় স্বাভাবিক প্রসবে একসঙ্গে চার শিশুর জন্ম, পরে এক নবজাতকের মৃত্যু

তিন নবজাতক চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক নারী স্বাভাবিক প্রসবে একসঙ্গে চার শিশুর জন্ম দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গাইনি বিভাগের কনসালট্যান্ট (পরামর্শক) আকলিমা খাতুনের তত্ত্বাবধানে তিন কন্যা ও এক পুত্রসন্তান জন্ম দেন ওই নারী। জন্মের পর পুত্রসন্তানটির মৃত্যু হয়েছে।

ওই নারীর নাম তাসলিমা খাতুন (২৩)। তিনি সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইমরান হোসেনের স্ত্রী। এই দম্পতির এর আগে তাসিফ হোসেন নামের ১ বছর ৯ মাস বয়সী এক ছেলেসন্তান আছে।

নবজাতকদের বাবা ইমরান হোসেন পেশায় ভ্যানচালক। তিনি বলেন, শৈশবে তাঁর মা–বাবার মৃত্যুর পর খুব কষ্ট করে বড় হয়েছেন। আট বছর আগে বিয়ে করে তিনি শ্বশুরবাড়ি রাজাপুর গ্রামে থাকেন। নিজের জায়গা–সম্পদ বলতে কিছুই নেই। একসঙ্গে তিন সন্তানের লালনপালন কীভাবে করবেন, সেটা ভেবে দুশ্চিন্তায় আছেন।

হাসপাতালে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের সময় গাইনি কনসালট্যান্ট আকলিমা খাতুনকে সহযোগিতা করেন চিকিৎসা কর্মকর্তা আসমা তাবাসসুম ও রিফা সানজিদা, সিনিয়র স্টাফ নার্স রানী বেগম, ফরিদা খাতুন, মহিমা খাতুন, জলি খাতুন ও আয়েশা সিদ্দিকা, শিক্ষার্থী নার্স চাঁদনী আক্তার, সোনিয়া খাতুন ও মৌমীনা জান্নাত।

গাইনি কনসালট্যান্ট আকলিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, তাসলিমা প্রথম সন্তান প্রসব করেছিলেন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। এবার সন্তান গর্ভে আসার পর যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, কখনো গর্ভে পাঁচটি সন্তান, আবার কখনো চারটি সন্তান আছে বলে মনে হয়েছে। যে কারণে তাসলিমাকে নিয়মিত পরিচর্যার মধ্যে রাখা হতো। তিনি আরও বলেন, ‘২০ বছর পেশাগত জীবনে আমার তত্ত্বাবধানে চার সন্তান প্রসবের ঘটনা এটা দ্বিতীয়। প্রথম ঘটনাটি ছিল ৮ মে। ওই দিন চুয়াডাঙ্গার একটি বেসরকারি হাসপাতালে দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী কল্পনা খাতুন সিজারের মাধ্যমে চার কন্যাসন্তান জন্ম দেন। কিন্তু নরমাল প্রসবের মাধ্যমে তাসলিমাই প্রথম চার সন্তান জন্ম দিলেন। আমিসহ তিনজন চিকিৎসক, পাঁচজন সিনিয়র স্টাফ নার্স, তিনজন স্টাফ নার্স ও আয়া-স্বেচ্ছাসেবকের নিরন্তর প্রচেষ্টায় সন্তান প্রসব সম্পন্ন হয়। পরে অবশ্য এক সন্তান মারা গেছে।’

স্বাভাবিকভাবে একসঙ্গে চার সন্তান জন্মের খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূঁইয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গরীর রূহানীকে নিয়ে হাসপাতালে দেখতে যান। ইউএনও প্রসূতি মা তাসলিমা খাতুনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং শিশুদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য প্রয়োজনে নগদ পাঁচ হাজার টাকা উপহার দেন। ইউএনও তিন নবজাতকের নাম রাখেন পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা।

ইউএনও শামীম ভূঁইয়া বলেন, নবজাতকদের বাবা একজন ভ্যানচালক। প্রাথমিকভাবে নবজাতক ও প্রসূতির চিকিৎসা বাবদ পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আরও সহযোগিতা করা হবে।