অরক্ষিত ৭ রেলক্রসিং, ঝুঁকি

ট্রেন আসার সংকেত পাওয়ার পর এক পাশের প্রতিবন্ধক নামানো হলেও অপর পাশের প্রতিবন্ধক বিকল থাকায় নামানো হয়নি। গতকাল সকালে ময়মনসিংহ নগরের নতুন বাজার রেলক্রসিংয়েছবি: প্রথম আলো

ট্রেন আসার সংকেত পাওয়া গেছে। গেটম্যান রেলক্রসিংয়ের এক পাশের প্রতিবন্ধক নামিয়েছেন; কিন্তু অন্য পাশের প্রতিবন্ধক বিকল। এতে নিজে দাঁড়িয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন। কিন্তু গেটম্যানকে ফাঁকি দিয়ে একটু পরপর মোটরসাইকেল চলে যাচ্ছে অন্য প্রতিবন্ধকের ফাঁকফোকর দিয়ে। এভাবে অন্তত আট মিনিট সময় যাওয়ার পর ট্রেন অতিক্রম করে।

গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ নগরের নতুন বাজার রেলক্রসিং এলাকার চিত্র এটি। শুধু নতুন বাজার নয়, ময়মনসিংহ নগরের ভেতরে থাকা সাতটি রেলক্রসিংয়ের এমন চিত্র অনেক বছর ধরেই। সাতটি রেলক্রসিংয়ের এক পাশের প্রতিবন্ধক থাকলেও অন্য পাশেরটি বিকল অথবা নেই। যে কারণে মাঝেমধ্যে ঘটছে দুর্ঘটনা।

পুলিশ ও রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের পচা পুকুরপাড় এলাকার রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার যাত্রী আবদুর রহমান (৬৫) ও শেফালি আক্তার (৩৫) নিহত হন। তাঁরা সম্পর্কে চাচা–ভাতিজি। তাঁদের বাড়ি ময়মনসিংহ শহরতলির বাড়েরা এলাকায়। নিজেদের একজন আত্মীয়ের বিয়ের কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার পথে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন তাঁরা।

সি কে ঘোষ রোড এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আজিম বলেন, ‘আমার বাড়ি রেললাইনের পাশে হওয়ায় প্রায়ই রেলক্রসিং এলাকায় বসে থাকি। অনেক বছর ধরেই দেখছি, রেলক্রসিংয়ের এক পাশের ব্যারিয়ার (প্রতিবন্ধক) নষ্ট। এটি দুর্ঘটনার একটি প্রধান কারণ। গতকাল রাতে পচা পুকুরপাড় এলাকার দুর্ঘটনার সময়ও এক পাশের ব্যারিয়ার নামানো হয়নি। যে কারণে যাত্রীসহ রিকশাটা ট্রেনের সঙ্গে আটকে অনেক দূর চলে যান। মর্মান্তিকভাবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের কথার প্রমাণ মেলে গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে ওই রেলক্রসিং গিয়ে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রেলওয়ের তিনজন কর্মী রেলক্রসিংয়ের প্রতিবন্ধক নামানোর খুঁটি স্থাপনের কাজ করছেন। আশরাফুল আলম নামের একজন কর্মী বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনার সময় প্রতিবন্ধক নামানো হয়েছিল কি না, সেটি বলতে পারি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রতিবন্ধকটি সংস্কার করার কথা বলায় আমরা কাজ করছি।’

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, ময়মনসিংহ নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের ভাষ্য ও সরেজমিন পাওয়া তথ্যমতে, ময়মনসিংহ নগরের ভেতর থাকা ভাটিকাশর এলাকায় দুটি রেলক্রসিং, মেডিকেল গেট এলাকা, সি কে ঘোষ রোড এলাকা, নতুন বাজার, মাদ্রাসা কোয়ার্টার ও সানকিপাড়া রেলক্রসিংয়ে এক পাশের প্রতিবন্ধক অন্তত পাঁচ বছর ধরে বিকল। ট্রেন আসার সংকেত পাওয়ার পর ওইসব রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান এক পাশের প্রতিবন্ধক নামালেও অন্য পাশের প্রতিবন্ধক নামাতে পারেন না। যে কারণে যানবাহন ও পথচারীদের অনেকেই সংকেত মানেন না। ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয় মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিন নগরের সি কে ঘোষ রোড, নতুন বাজার ও মাদ্রাসা কোয়ার্টার রেলক্রসিং এলাকায় ট্রেন চলাচলের সময় এ ধরনের পরিস্থিতি চোখে পড়ে। নতুন বাজার রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘আমি এক বছর ময়মনসিংহে কাজ করছি। শুরু থেকেই দেখে আসছি, প্রতিবন্ধক নেই। মুখে বলে বলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ আমার কথা শুনে না; বরং গলাগাল করে। এভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ শহরে ১০টি রেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি অরক্ষিত। এই সাতটির মধ্যে পাঁচটি রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের অধীন, দুটি রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের অধীন। এসব তথ্য জানিয়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট জানান, রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা পাঁচটি রেলক্রসিংয়ের প্রতিবন্ধক সংস্কার করার জন্য একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে।

রেলওয়ের ময়মনসিংহ অঞ্চলের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আকরাম আলী এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এক বছর ধরে ময়মনসিংহে কর্মরত আছি। তবে এর আগে থেকেই এসব প্রতিবন্ধক বিকল বলে জেনেছি। আমি যোগ দেওয়ার পর একবার লিখিতভাবে এবং পরবর্তী সময়ে একবার মৌখিকভাবে এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’