নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর লক্ষ্মীপুরে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রয়াত বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালের ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) শ্যামল চক্রবর্তী ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে মো. রুবেল নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে আগুন লাগান।
গত বৃহস্পতিবার রাতে লক্ষ্মীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর এলাকায় বাড়ি থেকে মো. রুবেলকে (৪১) গ্রেপ্তার করে। আজ শুক্রবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. আবু তারেক এ তথ্য জানান।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার আগের দিন বিকেলে রুবেল জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে স্থানটি দেখে আসেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শ্যামল চক্রবর্তী তাঁর বিকাশ নম্বরে ২ হাজার টাকা পাঠান। পরে রুবেল শহরের ঝুমুর রহমানিয়া হোটেল থেকে এক লিটার পানির বোতল কিনে পানি ফেলে দেন। এরপর স্টেডিয়ামের সামনে বেলালের দোকান থেকে ওই বোতলে এক লিটার পেট্রল কিনে বাড়িতে নিয়ে যান।
পুলিশ সুপার জানান, ১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে রুবেল মুখে মাস্ক পরে পেট্রলভর্তি বোতল নিয়ে ডিবি সড়ক দিয়ে হেঁটে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান। গেট টপকে ভেতরে ঢুকে নিচতলার উত্তর পাশের স্টোররুমের জানালা খোলা পেয়ে সেখানে পেট্রল ঢেলে সঙ্গে থাকা ম্যাচ লাইট দিয়ে আগুন ধরান। পরে বোতলটি সীমানাপ্রাচীরের ওপর দিয়ে ফেলে দেন।
আগুন লাগাতে গিয়ে তাঁর ডান পাশের কানের নিচে ও দাড়ির কিছু অংশ পুড়ে যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এরপর তিনি মুঠোফোনে আগুন লাগানোর দৃশ্যের ছবি তুলে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। সিসিটিভি ক্যামেরা আছে বুঝতে পেরে বাড়ি ফিরে পরিহিত জামাকাপড় আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন বলেও জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন রুবেল।
১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিচতলার একটি কক্ষে থাকা বেশ কিছু মালামাল ও নথিপত্র পুড়ে যায়। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসাইন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পরদিন বিকেলে শ্যামল চক্রবর্তী চুক্তির অবশিষ্ট ৮ হাজার টাকা রুবেলের বিকাশ নম্বরে পাঠান। রুবেলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নির্বাচন ভবনের উত্তর পাশের নিচু জমি থেকে ব্যবহৃত পানির বোতলটি উদ্ধার করা হয়েছে। টাকা পাঠানোর দুটি বিকাশ নম্বরও শনাক্ত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য শ্যামল চক্রবর্তীর মুঠোফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, রুবেলের কাছ থেকে একটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়েছে। ফোনটি পর্যালোচনায় আগুন লাগানোর সময় তোলা স্থিরচিত্র পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদ ও মুঠোফোনের কথোপকথন বিশ্লেষণ করে জেলা খাদ্যগুদাম ও এলজিইডি কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনার তথ্যও পাওয়া গেছে।
রুবেল সদর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হাকিমের বড় ভাই। তিনি বিদ্যুৎ অফিসে চালক হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর ভাইয়ের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তিন মাস আগে তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।