ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেঘনার তীররক্ষা বাঁধে ধস

ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরি ও লঞ্চঘাটের দক্ষিণে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের দুটি স্থানে ৭০ মিটারের ব্লক ধসে গেছে। গত বুধবার ব্লক ধসে পড়া শুরু হয়।

ভোলার উত্তর ভোলার ইলিশা ফেরি ও লঞ্চঘাট এলাকায় তীর সংরক্ষণ বাঁধের ব্লক ধসে পড়েছে। গতকাল তোলা ছবি
প্রথম আলো

ভোলা সদর উপজেলার উত্তর মেঘনার তীর রক্ষায় ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইলিশা-রাজাপুর রক্ষা প্রকল্পের ব্লক বাঁধের দুটি স্থান আবারও ধসে পড়েছে। এতে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা থাকায় এলাকার মানুষ আতঙ্কে আছে। 

 উজানের পানি নামাসহ মেঘনা উত্তাল হয়ে যাওয়ার কারণে বাঁধের ওই অংশে ধসে গেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিশেষজ্ঞরা জানান। ইলিশা-রাজাপুর রক্ষা প্রকল্পের ব্লক বাঁধের ধস ঠেকাতে পাউবো জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল বস্তা ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতিপূর্বে এ বাঁধ নির্মাণের সময় আরও দুটি স্থানের ব্লক ধসে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে সরেজমিন এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

সরেজমিন দেখা যায়, ভোলার সদর উপজেলার উত্তরে ইলিশা ইউনিয়নে অবস্থিত ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরি ও লঞ্চঘাটের দক্ষিণে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের দুটি স্থানে ৭০ মিটারের ব্লক ধসে গেছে। গত বুধবার সকাল থেকে ব্লক ধসে পড়তে শুরু করেছে। বুধবার বিকেলে পাউবোর ঠিকাদারের শ্রমিকরা জিও টেক্সটাইল বস্তায় বালু ভরার কাজ শুরু করেছে। 

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আর মাত্র ৭ হাত (১০-১১টি ব্লক) বাঁধ ধসে পড়লে তীর সংরক্ষণ বাঁধ বিলীন হয়ে যাবে। তারপরই আঘাত হানবে মাটির বাঁধে। মাটির বাঁধ ধসলে ভোলা শহরে পানি প্রবেশ করবে। 

স্থানীয় মো. কামাল হোসেন বলেন, এখানে আবার ব্লক তৈরি করে ফেলা উচিত। বালুভর্তি বস্তায় হয়তো জরুরি ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান হতে পারে। কিন্তু স্থায়ী সমাধানে এখানে ব্লক ফেলা দরকার। 

জরুরি ভিত্তিতে ধসে যাওয়া এলাকায় বালুর ১২ হাজার বস্তা ফেলা হবে। সার্ভে দল এসে পরিদর্শনের পর দরকার হলে আরও বস্তা ফেলা হবে।
মো.হাসানুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী, পাউবো, ভোলা

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম, স্থানীয় বাসিন্দা ইলিশা সোনাডুগি গ্রামের মো. ইউসুফ ও মো. হাসানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি যখন সাগরে নামে, তখন ভোলার মেঘনা নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মেঘনা নদীর মধ্যে যে দীর্ঘ চর রয়েছে, যার কারণে ইলিশা ফেরিঘাটের সামনে দুটি নদীর (ইলিশা ও মেঘনা) পাঁচটি চ্যানেলের মোহনা হয়েছে, সেখানে সারা বছর নদী অশান্ত থাকে। বর্ষার শেষ সময়ে ওই এলাকায় তীব্র স্রোত সৃষ্টি হওয়ায় তা ভয়ংকর রূপ নেয়। এ বছরও নদীর ভয়ংকর রূপের কারণে ব্লক বাঁধ ধসে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর আগে যে ব্লক বাঁধ সম্পন্ন হয়েছে, তা ধসে পড়ছে। 

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে ধসে যাওয়া এলাকায় বালুর ১২ হাজার বস্তা ফেলা হবে। সার্ভে দল এসে পরিদর্শনের পর দরকার হলে আরও বস্তা ফেলা হবে।’

পাউবোর বিশেষজ্ঞরা বলেন, মেঘনা দেশের অন্যতম বৃহৎ নদী। এই নদী দিয়ে ভারত, ভুটান, নেপাল ও বাংলাদেশের পানিনিষ্কাশন হচ্ছে। যার কারণে কখনো কখনো ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। 

পাউবো সূত্র আরও জানায়, পানির সঙ্গে নেমে আসা পলি ও বালু জমে ভোলা জেলার সৃষ্টি হয়েছে। এ জেলা এই কারণে ভাঙনপ্রবণ। এই ভাঙন ঠেকাতে ও দুর্যোগ মোকাবিলায় পাউবো প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পাউবো সূত্র আরও জানায়, ইলিশা-রাজাপুরসহ উত্তর ভোলার রাজাপুর ও পূর্ব-ইলিশা ইউনিয়নের তীর সংরক্ষণ বাঁধ এবং বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে ৩৩৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।