ঘূর্ণিঝড় থেকে বসতঘর রক্ষায় নদীপাড়ের মানুষের ব্যতিক্রমী প্রস্তুতি

রশি দিয়ে ঘরের চালা গাছের সঙ্গে টানা দিয়ে বাঁধছেন এক ব্যক্তি। আজ শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের লতাবাড়িয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে এগিয়ে আসছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনা সদর উপজেলার বিষখালী নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বসতঘর রক্ষার জন্য অনেকেই ঘরের চারপাশের খুঁটি ও ঘরের চালা রশি দিয়ে আশপাশের বিভিন্ন গাছের সঙ্গে টানা দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বিষখালী নদীর তীরে আজ শনিবার এ চিত্র দেখা গেছে।

বিষখালী নদীর ভাঙনকবলিত লতাকাটা ও মাছখালী এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের বিপৎসংকেত ঘোষণার পর গতকাল রাত থেকেই তাঁরা বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রয়োজনে তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন। তবে ঝড়বৃষ্টির সময় তাঁদের বসতঘর যাতে বিলীন না হয়ে যায়, সে জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।

আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বিষখালী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা বাঁধের বাইরের এলাকায় প্রায় ১০০ পরিবারের বাস। এ গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি কাঠ ও টিনের তৈরি। এসব বসতঘর রক্ষার জন্য অনেকেই ঘরের চারপাশে পাঁচ থেকে সাতটি রশি দিয়ে বড় গাছের সঙ্গে বেঁধে দিচ্ছেন।

ঝড়বৃষ্টির সময় বসতঘর যাতে বিলীন না হয়ে যায়, সে জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা
ছবি: প্রথম আলো

মাছখালী এলাকার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত ঘোষণার পরই ঘরের খুঁটি, চালা রশি দিয়ে বেঁধে গাছের সঙ্গে টানা দিয়েছি। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে ঘরে তালা দিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাব। বিষখালী নদীর পাশে আমাদের বাড়ি হওয়ার কারণে আমাদের ক্ষতি হয় বেশি। সিডরের সময় আমার ঘর পানিতে ভেসে গেছে। তাই এবার এ ব্যবস্থা করে রাখছি।’

পশ্চিম গুলবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ হাওলাদার বলেন, ‘সিগন্যাল আস্তে বাড়তেছে। তাই ভয়ে আগেভাগে রশি দিয়ে টানা দিয়েছি, যদি ঘর ভেঙে যায়। গরিব মানুষ ঘর তোলার টাকা পাব কই!’
ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভাঙা আছে। লতাকাটা গ্রামে শতাধিক পরিবার বাস করছে। ওই এলাকার রিং বাঁধটি নাজুক। ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে যেন ক্ষতি না হয়, সে জন্য মাটি দিয়ে রিং বাঁধ উঁচু করা হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মোখাকে কেন্দ্র করে জেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ৪২টি চিকিৎসা দল ও ৭টি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ-পরবর্তী জরুরি ত্রাণসহায়তার জন্য ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ১৪২ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ ব্যয় বাবদ ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা, ২ হাজার কম্বল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার মজুত রাখা রয়েছে।