বুড়িগঙ্গায় ওয়াটার বাস ডুবে তিনজন নিহত

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ড হাসপাতালে নিহতদের স্বজনদের আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রীসহ একটি ওয়াটার বাস ডুবে গেছে। এ ঘটনায় তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী বলেন, ওয়াটার বাসটি রাজধানীর লালকুঠি ঘাট থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেলঘাটে যাচ্ছিল। মাঝনদীতে এলে এটি বালুবোঝাই এমভি আরাবি নামের একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যায়। খবর পেয়ে রাত নয়টার দিকে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

আরও পড়ুন

রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা সাংবাদিকদের বলেন, রাত ১১টা পর্যন্ত আটজনকে উদ্ধার করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে পাঁচজন ছিলেন জীবিত, তিনজন অচেতন। উদ্ধার করা ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ, তিনজন নারী। সবাইকে মিডফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওয়াটার বাসটি শনাক্ত করা গেছে। এটি উত্তোলনের চেষ্টা চলছে। সেখানে ডুবে যাওয়া আরও কেউ আছেন কি না, খুঁজে দেখা হচ্ছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ড হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওয়াটার বাসডুবির ঘটনায় হাসপাতালে তিনজনের মরদেহ আনা হয়েছে। নিহত তিনজনই পুরুষ। এর মধ্যে একজনের নাম আলিফ (১৪)। তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। অপর দুজনের নাম–পরিচয় কিছুই জানা যায়নি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর রহমান।

ডুবে যাওয়া ওয়াটার বাসটির যাত্রী ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কেরানীগঞ্জে যাওয়ার জন্য লালকুঠি ঘাট থেকে ওয়াটার বাসে উঠি। নিচে বসার জায়গা না পেয়ে ওয়াটার বাসের ছাদে বসেছিলাম। আমার জানামতে, ওয়াটার বাসটিতে ৫৫ থেকে ৬০ জন যাত্রী ছিলেন। বাল্কহেডের ধাক্কায় আমিসহ কয়েকজন সাঁতরাতে থাকি। আশপাশের নৌকার মাঝিরা এসে আমাদের উদ্ধার করেন। নিচের যাত্রীদের বেশির ভাগই ডুবে গেছেন।’

এ বিষয়ে সদরঘাট নৌ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়াটার বাসটির কী পরিমাণ যাত্রী নিখোঁজ আছেন, আমরা জানতে পারিনি। রাত নয়টায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। বাল্কহেডটি জব্দ করা হয়েছে।’

এদিকে ওয়াটার বাসডুবির ঘটনায় স্বজন হারানোর শঙ্কায় রাতে বুড়িগঙ্গার তীরে ছুটে আসেন অনেকে। ঘটনার পর থেকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা লিয়নকে। তিনি পুরান ঢাকার ইসলামপুরে একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী। তাঁর মামা বাবু মিয়া খেয়ানৌকা নিয়ে ভাগনেকে খুঁজছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাগনে লিয়ন মোবাইলে জানাইছিল সে ওয়াটার বাসে বাসায় ফিরছে। তখন বাজে সাড়ে আটটা। এর পর থেকে তাঁর মোবাইল বন্ধ, লিয়নেরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’

কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সল বিন করিম বলেন, বাল্কহেডের চালক ও সহকারীদের আটক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যত দূর সম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে।