মহাসড়কে চলছে ধান–খড় শুকানো

জামালপুর-মাদারগঞ্জ মহাসড়কের ভাবকী বাজার থেকে হাজরাবাড়ী বাজার পর্যন্ত অংশে চলছে ধানমাড়াই। এতে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুর-মাদারগঞ্জ মহাসড়কের পাঁচ কিলোমিটার অংশে চলছে ধানমাড়াইয়ের কাজ। সড়কের ওপর শুকানো হচ্ছে ধান ও খড়। এতে সড়কটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। গাড়ির চাকায় পেঁচিয়ে খড় ছড়িয়ে যাচ্ছে সড়কজুড়ে। ভেজা খড়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালালে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান যানবাহনের চালকেরা।

জামালপুরের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী পংকজ ভৌমিক বলেন, মহাসড়ক আইন, ২০২১ অনুযায়ী, ফসল, খড় বা অন্য কোনো পণ্য শুকানো বা এ ধরনের কোনো কাজে মহাসড়ক ব্যবহার করা যাবে না। এতে যেকোনো সময়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। যাঁরা এই কাজটি করছেন, তাঁরাও ঝুঁকি নিয়ে করছেন। কেননা তাঁরা দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জামালপুর-মাদারগঞ্জ মহাসড়কটি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দক্ষিণ পাশ দিয়ে চলে গেছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে দেখা যায়, উপজেলার ভাবকী বাজার থেকে হাজরাবাড়ী বাজার পর্যন্ত অংশে ধানমাড়াই চলছে। সড়কের দুই পাশে ধান ও খড় শুকানো হচ্ছে। সড়কের মাঝখানের অংশ শুধু খালি। মাঠ থেকে ধান নিয়ে এসে সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। কোথাও সড়কের দুই পাশে ধান শুকানো হচ্ছে, কোথাও খড়। কেউ সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে খড় উল্টে-পাল্টে দিচ্ছেন। আবার কেউ ধান মাড়াই কাজ করছেন। এতে সড়কটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক রবিউল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন স্থান দখলে নিয়ে ধান ও খড় শুকানোয় নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে ধানের ভেজা খড়ের ওপর দিয়ে অটোরিকশা চালানো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় অন্য গাড়ি পাশ কাটানোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। ধান ও খড়মাড়াইয়ের জন্য সড়কের মাঝখান দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। এতে সময়ের অপচয়ও হচ্ছে।

এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামালপুর-মাদারগঞ্জ মহাসড়কটি একটি ব্যস্ততম সড়ক। ওই সড়ক দিয়ে জামালপুর জেলা শহর, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও মাদারগঞ্জ হয়ে নৌপথে বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যায়। দেড় সপ্তাহ ধরে ওই পাঁচ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থান ধানমাড়াই, খড় ও ধান শুকানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মেলান্দহ উপজেলার মহিরামকুল মোড়ে কথা হয় ট্রাকচালক মোহাম্মদ নাজমুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা হলে সবাই চালকদের ধরেন। সব দোষ দেওয়া হয় চালককে। কিন্তু সড়কের ওপর যে অবৈধভাবে ধান শুকানো হচ্ছে, সেটার কিন্তু কোনো দোষ নেই। ধান ও খড় শুকানোর সময় বারবার হর্ন বাজালেও লোকজন শুনতে চান না। তাঁদের মতো তাঁরা ধান ও খড় শুকাতে ব্যস্ত থাকেন। সড়কের দুই পাশে ধান শুকানোর কারণে গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়।

হাজরাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, সড়কে খড় শুকাতে দেওয়ায় প্রায়ই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। খড়ের ওপর মোটরসাইকেল ব্রেক করলেই চাকা পিছলে যায়। গত সপ্তাহে ভাবকী এলাকায় খড়ে মোটরসাইকেল পিছলে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

কোনামালঞ্চ এলাকার আবদুল্লাহ নামের এক কৃষক সড়কে ধান ও খড় শুকাতে দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাড়িতে ধান শুকানোর জায়গা কম। এলাকায় পাকা জায়গা পাওয়া যায় না। সড়ক পরিষ্কার এবং রোদ বেশি পড়ে। সড়কে দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান ও খড় শুকিয়ে যায়। কোথাও জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে, এখানে ধান শুকাতে দিয়েছেন।

মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ওই সড়কে ধান শুকানোর বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে ধান ও খড় শুকানো বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে ওই সড়কের আশপাশের কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।