বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ থেকে বিপুলসংখ্যক দেশি অস্ত্র উদ্ধার

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের কয়েকটি কক্ষ থেকে বিপুলসংখ্যক দেশি অস্ত্র উদ্ধারের পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল করেন। শনিবার সন্ধ্যায়
ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের কয়েকটি কক্ষ থেকে বিপুলসংখ্যক দেশীয় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে হল কর্তৃপক্ষ। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

শনিবার বিকেলে হলের ২০০৬, ৩০০৫ ও ৫০০৯ নম্বর কক্ষ থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করেন হলের প্রাধ্যক্ষ আবু জাফর মিয়া। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

হলের শিক্ষার্থীরা জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকলেও হলের যেসব কক্ষ থেকে দেশীয় এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, কক্ষগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন থাকেন। তাঁরা বরিশালের বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কক্ষগুলোয় বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা তাহমিদ জামান ওরফে নাভিদ এবং একই বর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিব ওরফে মঞ্জুসহ তাঁদের অনুসারীরা থাকতেন। অভিযানে কক্ষগুলো থেকে ২ শতাধিক জিআই পাইপ, ১৩টি রড, ২টি বগি দা ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।

গতকাল শুক্রবার রাতে অস্ত্রগুলো হলে মজুত করা হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন। হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রুম্মান ইসলাম বলেন, তাহমিদ ও আরও কয়েকজনকে গতকাল গভীর রাতে হলে অস্ত্র আনতে দেখেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। আজ দুপুরে শিক্ষার্থীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে ২০০৬ নম্বর কক্ষে তালা লাগিয়ে দিয়ে প্রাধ্যক্ষকে খবর দেন। প্রাধ্যক্ষ কক্ষের তালা খুলে দুই বস্তায় ২৫টি জিআই পাইপ উদ্ধার করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের তিনজন আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ২০০৬ নম্বর কক্ষে অভিযান চালানোর পর ৩০০৫ ও ৫০০৯ নম্বর কক্ষে অভিযান চালানো হয়। ওই কক্ষ দুটি থেকে দেড় শতাধিক জিআই পাইপ ও প্রায় ৩০টি রড উদ্ধার হয়। কক্ষগুলো ছাত্রলীগ নেতা তাহমিদ ও তানজিবের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

এদিকে হলের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ইরাজ রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় অভিযান চালানোর জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নানাভাবে গড়িমসি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল রাখতে এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এমনটি আশা করেন তিনি।

শের-ই-বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ আবু জাফর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে একটি কক্ষ তালা দেওয়ার খবর পেয়ে দ্রুত তিনি হলে যান এবং শিক্ষার্থীদের সামনে ২০০৬ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে ২৫টি জিআই পাইপ উদ্ধার করা হয়। কক্ষটিতে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিব, তাহমিদ থাকেন। এরপর আরও দুটি কক্ষে অভিযান চালিয়ে কিছু রড, বগি দা ও জিআই পাইপ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তিনি জানান।