‘প্রথম আলো একটি ইনস্টিটিউশন, একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই সাংবাদিকতাকে একটা মাত্রায় নিয়ে যাওয়া, এটাকে একটা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তুলনা করা যায়—এই মাত্রায় প্রথম আলোই নিয়ে গেছে।’
বুধবার বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রথম আলো আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে যোগ দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। পত্রিকাটির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহরের গোবিন্দনগর এলাকার ইএসডিও প্রধান কার্যালয় চত্বরের ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ ভাস্কর্যের বেদিতে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সুধী সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রথম থেকে প্রথম আলোর একটা চেষ্টা ছিল যে এই দেশে একটি সত্যিকার অর্থেই প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক এবং বুদ্ধিচর্চায় বিশ্বাসী একটি তরুণ প্রজন্মের সৃষ্টি করা। চেষ্টা করেছে; তবে কতটা সফল হয়েছে, সেটা আমি বলতে পারব না। এখন আমরা যা দেখছি, তাতে মনে হয় প্রথম আলো খুব একটা সফল হতে পারেনি। আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে যাঁরা সাম্প্রদায়িকতার চর্চা করেন, তাঁরা বেশ বাহবা পান, তালি পান, অনেক পাঠকও পেয়ে যান। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে একটা ভয়াবহ উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে, যেটা এ দেশের জন্য, জনগণের জন্য কখনই শুভ বার্তা বয়ে আনে না।’
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসটাই হচ্ছে অভ্যুত্থানের ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাস হচ্ছে প্রতিরোধের ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাসই হচ্ছে অন্যায়কে মেনে না নেওয়ার ইতিহাস। এই বোধটা আমাদের সবার মধ্যে সৃষ্টি করতে প্রথম আলো আমাদের সাহায্য করেছে—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’ তিনি বলেন, ‘আজকে খুব খারাপ লাগে, দুঃখ লাগে; আমাদের এই দৃশ্য দেখতে হয়, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের জন্য প্রথম আলোর কার্যালয় ঘেরাও করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এই বিষয়গুলো বাংলাদেশে সাজে না, মানায় না। এটা বাংলাদেশের আত্মার প্রতিনিধিত্ব করে না।’
বিকেল চারটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সুধী সমাবেশ সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি মজিবর রহমান খান। এতে রাজনীতিক, শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, নাট্যজন, শিল্পী, সংস্কৃতি-ক্রীড়া সংগঠক, চিকিৎসক, কবি-সাহিত্যিক, নারীনেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেন।
সমাবেশে আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম আলো মেরুদণ্ড সোজা করে লেখে। দিন শেষে প্রথম আলোর ওপরই আমরা ভরসা রাখি। হাজারো মিথ্যার ভিড়ে সত্য সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুক—এটাই আমাদের চাওয়া।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম বলেন, ‘খুদে পাঠক থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠরাও প্রথম আলোর পাঠক। প্রথম আলো না পড়লে ভালো লাগে না। তবে মফস্সলের পাতায় খবর কম থাকে। মফস্সলের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আরও সংবাদ আমরা আশা করি।’
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক নাসরীন জাহান বলেন, ‘প্রথম আলোর অনন্য সৃষ্টি বন্ধুসভা। আমি সময় পেলেই বন্ধুসভার আয়োজনে উপস্থিত হই। তাঁদের সংস্পর্শে এলে মনে হয় না বয়স হয়েছে। সমাজ নিয়ে তাঁদের সৃজনশীল ভাবনা আমাকে অবাক করে।’
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী দেলাওয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি দেশ বা জাতি ও রাজনৈতিক দলকে সঠিকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনা সব সময় প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে প্রথম আলো সব সময় সেই ভূমিকা পালন করে এসেছে। সামনের দিনেও এই ভূমিকা পালন করে যাবে বলে বিশ্বাস করি।’
ঠাকুরগাঁওয়ের প্রবীণ শিক্ষাবিদ মনতোষ কুমার বলেন, দেশের যা কিছু অর্জন, তার অনেক কিছুর মধ্যে প্রথম আলো আছে। লেখায় পরিচ্ছন্নতা থাকায় পাঠক হিসেবে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শুদ্ধ বানানের পাশাপাশি শিরোনামে সৃজনশীলতা রয়েছে। বাসায় পত্রিকাটি থাকলে ছেলেমেয়েরা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম আলোর নিউজকে আমরা কোটেশন হিসেবে ব্যবহার করি। যখন কোনো তথ্য খুঁজি, তখন তথ্যসূত্রে প্রথম আলো আছে কি না দেখি। প্রথম আলো যেভাবে যাত্রা শুরু করেছিল, সেই ধারা যেন অব্যাহত থাকে।’
ইকো পাঠশালা অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সেলিমা আখতার বলেন, ‘নির্ভীক সত্য তথ্য প্রদানে প্রথম আলোর বিকল্প নেই। আমরা বিশ্বাস করি প্রথম আলো যে তথ্য-উপাত্ত দেয়, তাতে আমরা শাণিত হই। আমাদের জ্ঞানচর্চা সমৃদ্ধ হয়। আমরা প্রথম আলোকে বিশ্বাস করি, ধারণ করি ও লালন করি।’
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পাঠকেরা প্রথম আলোর কাছে তাঁদের প্রত্যাশাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন সাবেক জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা আবু মহিউদ্দিন, আইনজীবী জাহিদ ইকবাল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাসুদ আহমেদ, শিক্ষক নাজমুন নুর প্রমুখ। পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলোর উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি।
লাজ্জাত এনাব মহছি বলেন, ‘প্রথম আলোর ভিত্তি হচ্ছে পাঠকের আস্থা। এই আস্থা একটু একটু করে অর্জন করতে হয়েছে। পাঠকদের ভালোবাসা আমরা সব সময় পেয়েছি। তা না হলে আমরা এই পথ অতিক্রম করতে পারতাম না। এ বছর আমরা দুটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। এই অর্জন কিন্তু প্রথম আলোর পাঠকদের জন্যই সম্ভব হয়েছে।’
লাজ্জাত এনাব মহছি আরও বলেন, ‘প্রথম আলোর বিরুদ্ধে হামলা-মামলা হয়েছে। কিন্তু আমরা সেসব হামলা-মামলা উপেক্ষা করে সত্য লিখে গেছি। আমরা জানি, শক্তির উৎসই হচ্ছে পাঠক। পাঠকেরা আমাদের পাশে থেকে আমাদের সাহস দিয়েছেন।’