শেখ হাসিনা সেতুর ওপর দিয়ে আবারও ভারী যান চলাচল বন্ধ

শেখ হাসিনা সেতুতে ভারী যান চলাচল বন্ধ করতে রংপুর-কাকিনা আঞ্চলিক মহাসড়কের রুদ্রেশ্বর এলাকায় আবারও প্রতিবন্ধক দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সকালেছবি: মঈনুল ইসলাম

তিস্তা নদীর ওপর রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে পাঁচ বছর আগে। উদ্বোধনের পর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহনের চলাচল বন্ধ ছিল সাড়ে তিন বছর। দেড় বছর আগে বাস-ট্রাক চলাচল শুরু হলেও সংযোগ সড়ক দুর্বল হয়ে পড়ায় এখন আবার তা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে সড়ক সংস্কার ও নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। এ জন্য সেতুর উত্তর প্রান্তে প্রতিবন্ধক খুঁটি বসানো হয়েছে।

ভারী যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় এই রুটে আগে থেকে চলা গাড়িগুলোকে এখন ৫০ কিলোমিটার পথ ঘুরে লালমনিরহাট জেলা শহর হয়ে রংপুরের কাউনিয়ার ওপর দিয়ে চলাচল করছে। এই রুটে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক-বাস চলাচল করে। বেশি দূরত্বের কারণে যানবাহনগুলোর পরিবহন খরচ ও ভাড়া আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) জহির ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জের ইউএনও কার্যালয়ে জরুরি সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে সেতু দিয়ে সব ধরনের ভারী যানবাহন সাময়িক বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য লালমনিরহাটের পাটগ্রামে অবস্থিত বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার দূরত্ব কমিয়ে আনতে তিস্তা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর উদ্বোধন করেন। পরে এটির নামকরণ করা হয় শেখ হাসিনা সেতু। সেতুটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর এলাকার সঙ্গে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়নের মহিপুর এলাকাকে সড়কপথে যুক্ত করেছে। ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের সেতুতে রয়েছে ১৬টি পিলার, ১৭টি স্প্যান, ৮৫টি গার্ডার।

ভারী যানবাহনের চলাচল বন্ধ করতে সম্প্রতি সেতুর উত্তর প্রান্তে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর এলাকায় সংযোগ সড়কের মধ্যে লোহার পাইপ দিয়ে তৈরি একটি প্রতিবন্ধক দেওয়া হয়েছে। তবে সেতুর ওপর দিয়ে পিকআপ, কার, মাইক্রোবাস চলাচল করতে পারে।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বুড়িরহাট থেকে মহিপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ৯টি গুচ্ছে প্রায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্যাকেজে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে মাটির কাজ ও ৬টি প্যাকেজে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক পাকাকরণের কাজ আছে। এসব কাজ নভেম্বরে শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।

রংপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টিবাদলের দিন শেষ হলে এ সড়কের কাজ শুরু করা হবে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। এ ছাড়া লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন এলজিইডির ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নতুন করে সংস্কার ও প্রশস্ত করতে হবে।

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের ট্রাক এখন লালমনিরহাট জেলা সদর ঘুরে রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে ৫০ কিলোমিটার বেশি পথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। রংপুর থেকে লালমনিরহাট শহর হয়ে বুড়িমারীর দূরত্ব প্রায় ১৪০ কিলোমিটার। গঙ্গাচড়ায় সেতুর ওপর দিয়ে এই পথ প্রায় ৯০ কিলোমিটার।

ব্যবসায়ীরা বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে লালমনিরহাট হয়ে রংপুর আসতে ট্রাকপ্রতি ভাড়া পড়ে ১৫-১৬ হাজার টাকা। সেখানে গঙ্গাচড়ায় এই সেতুর ওপর দিয়ে ভাড়া পড়ত ৯-১০ হাজার টাকা।

আমদানিকারক মনজুর আহমেদ বলেন, গঙ্গাচড়া উপজেলায় সেতু দিয়ে পারাপারে পণ্যবাহী গাড়ি আসতে সময় কম ও গাড়িভাড়া অনেক কম পড়ত। প্রায় এক বছর গাড়ি চলাচল হলেও এখন তা বন্ধ হওয়ায় বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে তাঁদের।