উত্তাল সাগরে কক্সবাজার সৈকতে গোসল নিষিদ্ধ, ঝাউগাছ বিলীন
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলের সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকের তুলনায় ৪-৫ ফুট উচ্চতার ঢেউ সৈকতে আছড়ে পড়ছে। এতে সমিতিপাড়া-ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও কবিতা চত্বর পয়েন্ট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঝাউবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সাগর উত্তাল থাকায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সৈকতে পর্যটকদের গোসলে নামা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। আজ ও আগামীকাল ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক শ পর্যটক সৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে উত্তাল সাগর দেখছেন। সেখানে লাল নিশানা টাঙিয়ে গোসল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। লাইফগার্ড ও পর্যটন পুলিশ মাইকিং করে সতর্কতা প্রচার করছেন।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেটস্কিসহ গভীর সমুদ্রে ঘুরে দেখার দ্রুতগামী জলযান নামানো হয়নি। পর্যটক না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন আলোকচিত্রী, ঘোড়ার পরিচর্যাকারীসহ সৈকতকেন্দ্রিক অন্য কর্মীরা। লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টেও লাল নিশানা টাঙিয়ে গোসল বন্ধ রাখা হয়েছে। কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে কাজ করছেন বেসরকারি ‘সি-সেফ’ প্রতিষ্ঠানের ২৫ জন কর্মী।
সুগন্ধা পয়েন্টে দায়িত্বে থাকা লাইফগার্ড মোহাম্মদ শুক্কুর প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ৯টার দিকে জোয়ার শুরু হয়। ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি। মাঝে মাঝে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সৈকতে পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। কিছু পর্যটক সাগরে নামার চেষ্টা করলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকার পর্যটক রওশন জামিল তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজারে আসেন। আজ দুপুরে সুগন্ধা সৈকতে গিয়ে গোসল করতে না পেরে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন ধরে কক্সবাজারে আছি। আজকে সাগর অনেক বেশি উত্তাল। গোসল করতে না পেরে মন খারাপ হয়ে গেল।’
আরেক পর্যটক মো. এমদাদ বলেন, ‘এমন উত্তাল সাগর আগে কখনো দেখিনি। বিশাল ঢেউ এসে বালুচর ডুবিয়ে দিচ্ছে। অনেক ঝাউগাছ উপড়ে গেছে।’
দুপুরে কবিতা চত্বর, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও সমিতিপাড়া পয়েন্টে দেখা গেছে, জোয়ারের তোড়ে শতাধিক ঝাউগাছ উপড়ে গেছে। আরও অনেক গাছ হেলে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া জিও টিউব ব্যাগের বাঁধ ডিঙিয়ে সাগরের পানি ঝাউবাগান সয়লাব করছে। অনেক পর্যটক জিও বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে উত্তাল সাগরের পটভূমিতে ছবি তুলছেন।
বেলা ১১টা, সাড়ে ১২টা ও ৩টার দিকে ভারী বৃষ্টিপাতে কিছু পর্যটক ভিজে সাগর উপভোগ করছিলেন। ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে তাঁদের বালুচরে ফিরিয়ে আনেন লাইফগার্ড সদস্যরা।
সাগরে গোসল বন্ধ থাকায় এবং আবহাওয়া খারাপ থাকায় হাজারো পর্যটক হোটেল কক্ষে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ যানবাহনে করে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দিকে ছুটছেন। পাহাড় আর সাগরবেষ্টিত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের প্রান্তে টেকনাফ সৈকতে গিয়ে অনেকে রঙিন মাছ ধরার নৌকার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে গোসল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।
কক্সবাজার কলাতলী হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজের ৭০ শতাংশ কক্ষ খালি রয়েছে। হোটেলগুলোর মোট ধারণক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার।