সিলেটবাসীর সঙ্গে ‘বৈষম্যের’ প্রতিবাদ, আশ্বাস পেয়ে সড়ক ছাড়লেন গণ-অবস্থানকারীরা

সিলেটের উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে নগরের কোর্ট পয়েন্টে গণ-অবস্থান কর্মসূচি। আজ রোববার দুপুরেছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটবাসীর সঙ্গে ‘উন্নয়ন বৈষম্য ও বঞ্চনার’ প্রতিবাদে করা গণ-অবস্থান কর্মসূচি সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর স্থগিত ঘোষণা করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। ‘সিলেট আন্দোলন’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে নগরের সিটি পয়েন্ট সড়কে অবস্থান নিয়ে আরিফুলের নেতৃত্বে কয়েক হাজার মানুষ কর্মসূচি শুরু করেন। বিকেল চারটার দিকে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাড়ে চারটার দিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে আরিফুল হক কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।

জেলা প্রশাসক কর্মসূচিস্থলে এসে আরিফুল হকসহ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সমগ্র সিলেটের সড়কব্যবস্থা অসহনীয়ভাবে হুমকির মুখে আছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশাপাশি সিলেটের অভ্যন্তরীণ সড়কের বেহাল অবস্থা সিলেটবাসীকে ভোগাচ্ছে। রেলপথ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাও পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। নতুন ট্রেন চালু, বগি সংযোজন ও বিদ্যমান রেলপথ সংস্কার প্রয়োজন। অন্যান্য এলাকায় অভ্যন্তরীণ রুটের চেয়ে সিলেটে বিমানভাড়াও বেশি।

আরিফুল হক চৌধুরী আরও বলেন, বন্যাপ্রবণ সিলেটবাসীর দুর্ভোগ দূর করতে মহাপরিকল্পনা নিতে হবে। সিলেট থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হলেও এখানে আবাসিক-অনাবাসিক গ্যাস–সংযোগ বন্ধ আছে। বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং সবাইকে ভোগাচ্ছে। নগরজুড়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষেত্রে সিলেট উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার। পরিবেশের দোহাই দিয়ে অনেক বড় প্রকল্প আটকে রাখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সিলেটবাসী ব্যাপকভাবে উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় তিনি বৈষম্যের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন।

সব শোনার পর জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম সিলেটের বড় বড় সমস্যাগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে জানাবেন উল্লেখ করে গণ-অবস্থান কর্মসূচি থেকে সবাইকে সরে আসার অনুরোধ জানান। এরপর আরিফুল হক চৌধুরী আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে গণ-অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে না পড়লে আবার কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

এর আগে গণ-অবস্থান কর্মসূচি শুরুর পর বেলা একটার দিকে আরিফুল হকের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীরা সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে উন্নয়ন বৈষম্য দূর করার দাবিতে নানা স্লোগান দেন। এ সময় আরিফুল বলেন, ‘সিলেটের সঙ্গে উন্নয়ন নিয়ে চরম বৈষম্য করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরা রাজপথ দখলে নিলাম। সরকারের যৌক্তিক জবাব না পাওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’

কর্মসূচি চলাকালে সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বক্তব্য দেন। কর্মসূচি চলাকালে সিটি পয়েন্ট থেকে সুরমা পয়েন্ট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে আশপাশের সড়কে যানজট দেখা দেয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরের কুমারপাড়া এলাকার নিজ বাসভবনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন আরিফুল হক চৌধুরী। ওই সভা থেকে সিলেট অঞ্চলের ন্যায্য দাবি আদায়ে ‘সিলেট আন্দোলন’ নামে একটি সর্বজনীন প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়।