উগান্ডার জাতীয় পাখি প্রথমবার ছানার জন্ম দিল গাজীপুরের সাফারি পার্কে

একটি ছানার জন্ম দিয়েছে উগান্ডার জাতীয় পাখি গ্রে ক্রাউন্ড ক্রেন। আজ রোববার দুপুরে গাজীপুর সাফারি পার্কেছবি: প্রথম আলো

একটু শব্দ হলেই লম্বা গলা তুলে আশপাশে দ্রুত দৃষ্টি ফেলছে দুটি গ্রে ক্রাউন্ড ক্রেন পাখি। ঝুঁকিপূর্ণ দূরত্বে মানুষের অবস্থান দেখলেই পাখিগুলো সজাগ হয়ে উঠছিল। কারণ, তাদের সঙ্গে আছে একটি ছোট্ট ছানা। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই মা–বাবা সর্বক্ষণ নজর রাখছিল আশপাশে।

দৃশ্যটি গাজীপুর সাফারি পার্কের সাফারি কিংডম এলাকার। সেখানে বিশাল আকারের খাঁচার ভেতর কালিম, পেলিক্যান, রাজধনেশসহ বিভিন্ন পাখির সঙ্গে এক জোড়া গ্রে ক্রাউন্ড ক্রেনের বসতি। আজ রোববার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বেষ্টনীর একেবারে পশ্চিম প্রান্তে ছোট ঘাস–পাতার আড়ালে একটি ছানাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। কয়েক দিন আগেই ডিম ফুটে বেরিয়েছে ছানাটি। গায়ের রং সাদা ও বাদামি। গ্রে ক্রাউন্ড ক্রেন পাখির মাথার ওপরে দৃষ্টিনন্দন ঝুঁটি থাকলেও ছানাদের তেমনটি দেখা যায় না। তবে মাথার ওপরে লোম অপেক্ষাকৃত বড়। ছানাটির পা দুটো শরীরের তুলনায় কিছুটা লম্বাটে গঠনের। ঘাসের আড়ালে সে যেখানেই যাচ্ছে, সঙ্গে যাচ্ছে মা ও বাবা পাখি।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্রে ক্রাউন্ড ক্রেন উগান্ডার জাতীয় পাখি। ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এই পাখিগুলো আনা হয়। বিভিন্ন সময় ডিম দিলেও ছানার জন্ম হয়নি। এবারই প্রথম ছানা হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ছানাটির জন্ম হয়। ওই দিন সকালে ছানাটিকে পার্কের এক কর্মী বেষ্টনীর এক প্রান্তে দেখতে পান। সেটি স্ত্রী নাকি পুরুষ, তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। প্রথমে একটি ডিম পাড়ে। এরপর আরও দুটি ডিম পাড়ে মা পাখি। বেষ্টনীর এক কোণে ঝোপের আড়ালে মা ও বাবা পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দিতে থাকে। তিনটি ডিমের মধ্যে কেবল একটি ডিম ফুটে ছানার জন্ম হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, এদের ডিম ফুটে ছানার বের হতে ২৮–৩০ দিনের মতো সময় লাগে।

পার্কের বন্য প্রাণী–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গ্রে ক্রাউন্ড ক্রেন বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের জন্য সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। এরা অন্যান্য পাখি ডাক নকল করে সেভাবে ডাকতে পারে। এ ছাড়া টিকে থাকার কৌশল হিসেবে এদের রয়েছে বিচিত্র বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের স্বভাব। এসব পাখি একনাগাড়ে মাইলের পর মাইল উড়তে পাড়ে। বিশাল ডানা এদের ওড়ার এই অতিরিক্ত শক্তি জোগায়।

গাজীপুর সাফারি পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার সরোয়ার হোসেন খান বলেন, সাফারি পার্কে, এমনকি দেশে প্রথম এই পাখির ছানার জন্ম হয়েছে। পাখিগুলো উন্মুক্ত পরিবেশে ২০ বছর বাঁচে। তবে আবদ্ধ পরিবেশে বাঁচে প্রায় ২৫ বছর। তিন বছর বয়সে এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। গ্রে ক্রাউন্ড ক্রেন একবার সঙ্গী বাছাই করলে সারা জীবন সে সম্পর্ক টিকে থাকে। সাফারি পার্কে পাখিটি ছানা দেওয়ার ফলে ভবিষ্যতে আরও ছানা পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

সহকারী বন সংরক্ষক ও গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তারেক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি এই পাখি বাংলাদেশের পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে। তাই ডিম ফুটে ছানার জন্ম হয়েছে। পর্কের পরিবেশ যে তাদের উপযোগী, তা এই ঘটনা জানান দেয়। বিষয়টি খুবই আনন্দের। এই কৃতিত্ব পার্ক–সংশ্লিষ্ট সবার। ছানাসহ পাখি দুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।