ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কাটার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কাটার প্রতিবাদে চলছে অবস্থান কর্মসূচি। সোমবার সকালে ক্যাম্পাসেছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈশাখী মঞ্চ তৈরির জন্য দুই যুগের পুরোনো তিনটি গাছ কাটা হয়েছে। এর প্রতিবাদে আজ সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে চলছে অবস্থান কর্মসূচি।

আজ বেলা ১১টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস শাখা ছাত্র ইউনিয়নের নেতা–কর্মীরা কাটা গাছ পড়ে থাকার স্থানে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লেখা পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে এবং বসে থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। পাশাপাশি পরিবেশ নিয়ে কাজ করা আরও দুটি সংগঠন প্রতিবাদ জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে এসে দেখা যায়, ফলিতবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবন ও অনুষদ ভবনের মাঝে বটতলা প্রাঙ্গণে সড়কের পাশে তিনটি পুরোনো গাছ কাটা অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে চার থেকে পাঁচ শ্রমিক কাটা গাছের অংশগুলো ছোট ছোট আকারে কাটছিলেন। পরে ভ্যানে কাটা অংশগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
কথা হলে গাছ কাটা শ্রমিক ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা গতকাল রোববার থেকে এই গাছগুলো কাটা শুরু করেছিলেন। তিনিসহ পাঁচ শ্রমিক এই গাছগুলো কাটছেন। আজকের মধ্যে কাটা অংশগুলো এখান থেকে সরিয়ে নেবেন। এই তিন গাছ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনটি গাছ জীবিত। প্রশাসন থেকে তাঁকে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা বলে গাছ কাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ দিয়েছে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা–কর্মী এসে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেন। তাঁরা বলেন, এখন এই মুহূর্তেই গাছের কাটা অংশগুলো সরানো যাবে না। প্রশাসন বলেছে, ৩০০ গাছ লাগাবে, তারপর এই অংশগুলো নিয়ে যাবে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, গাছ কেটে সাংস্কৃতিক চর্চা মেনে নেওয়া যায় না। গাছ না কেটে বিকল্প জায়গায় মঞ্চ তৈরি করা যেত।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, তিনটি গাছের মধ্যে দুটি গাছ মরে গিয়েছিল। একটির ডালপালা মৃত। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে গাছগুলো কাটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণে বৈশাখী মঞ্চ তৈরির পরিকল্পনা করে প্রশাসন। সেই মোতাবেক অনুষদ ভবনের সামনের সড়ক দিয়ে বিজ্ঞান ভবনে যেতে ডান দিকে সারিবদ্ধভাবে লাগানো তিনটি কড়ইগাছের জায়গায় মঞ্চ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। নিজের টাকা দিয়ে ওই গাছগুলো ২০০০ সালের দিকে লাগিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুঈদ রহমান। গতকাল সকাল থেকে তিন-চার শ্রমিক কুড়াল ও দা দিয়ে গাছ কাটা শুরু করেন। বিকেলের মধ্যে সব গাছ কাটা হয়ে যায়।

অধ্যাপক মুঈদ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো গাছ কাটা পড়লে খারাপ লাগে। গাছগুলো ২০০০ সালে আমার হাতেই লাগানো। বয়স ২৪ বছর হলো। গাছগুলোর মালিক এখন প্রশাসন। তবে গাছ কাটা দেখতে খারাপ লাগছে। কাটা খুব প্রয়োজন ছিল কি না, জানি না। তবে বিষয়টি পরিকল্পিত হলো না। ঠান্ডা মাথায় ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম ছুটিতে আছেন। উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি গাছ মৃত। আরেকটি গাছের ডাল মরে গেছে। অন্য ডালগুলো ভেঙে পড়তে পারে। তাই বিজ্ঞান বিভাগের ডিনসহ প্রকৌশল দপ্তরের প্রকৌশলীদের নিয়ে আলোচনা করে গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে মঞ্চ তৈরি করলে ভালো হয়।’