ইঞ্জিনচালিত ইজিবাইকে বিশেষ কায়দায় স্থাপন করা হয়েছে নৌকার আকৃতি। এর ওপর বাঁধা মাইকে উচ্চ স্বরে বেজে চলেছে ‘নৌকা মার্কার হবে জয়, ও খালাগো নৌকা মার্কার হবে জয়, যত আছেন ময়মুরুব্বি ছোট বড় ভাই, রশীদুজ্জামানের পক্ষ থেকে সালামও জানাই।’
এর একটু দূরে ভ্যান গাড়ির ওপর মাইক লাগিয়ে বাজানো হচ্ছে—‘কী সুন্দর ঈগল মার্কা, দেখে তো মন মানে না, মাহবুব ভাই মানুষ ভালো, জয় হবে ইনশা আল্লাহ।’ এ ধরনের গানে গানে ভোট প্রার্থনায় মুখর কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত।
এ আসনে এবার ভোটে অংশ নিচ্ছেন মোট সাতজন প্রার্থী। কিন্তু প্রতীক বরাদ্দের পরও তাঁদের সবার দেখা মিলছে না ভোটের মাঠে।
গতকাল শনিবার বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কয়রা উপজেলার মহারাজপুর, আমাদী, বাগালী, ফুলতলা বাজার, দেউলিয়া বাজার, হোগলারহাটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থীর পক্ষে ভ্যান গাড়ি ও ইজিবাইকে মাইক বেঁধে রেকর্ড করা গানে প্রচার চালানো হচ্ছে। খুলনা-৬ আসনের বিএনএম প্রার্থী নেওয়াজ মোরশেদের নোঙর প্রতীকের সঙ্গে মিলিয়ে বাজানো হচ্ছে—‘নোঙ্গর তোলো তোলো, সময় যে হলো হলো, নোঙ্গর তোলো তোলো।’ সঙ্গে চলছে প্রার্থীর নানা গুণকীর্তন।
তবে এলাকায় ঘুরে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে গান শোনা গেছে বেশি। এ দুই প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রশীদুজ্জামান ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জি এম মাহবুবুল আলম। এ দুজনের নির্বাচনী তৎপরতা ও প্রচারণা বেশ জোরেশোরে চলছে। এ আসনে মূলত নৌকা ও ঈগলের দুই প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।
কয়রা উপজেলার আমাদী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থীর পক্ষে অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্পে মাইক লাগিয়ে বাজানো হচ্ছে ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা। শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’ আবার মহারাজপুর এলাকায় ঈগল প্রতীকের অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্পে সাউন্ড বক্সে বেজে চলেছে ‘উন্নয়ন আর মানবতার নেতা মাহবুব ভাই, তাই তো মোরা সংসদে এবার তাঁকে চাই। মাহবুব ভাইয়ের সালাম নিন, ঈগল মার্কায় ভোট দিন।’
আমাদী গ্রামের ইজিবাইকচালক আবুল কালাম তাঁর ইজিবাইকে মাইক বেঁধে গানের রেকর্ড বাজিয়ে প্রার্থীর প্রচার চালাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন মাইক বাজিয়ে এক হাজার টাকা ইনকাম হয়। ভোটের সময় এইটাই লাভ। ভোট শেষ হলে তো এই ইনকাম হবে না।’
কয়রা উপজেলা সদরের দেউলিয়া বাজারে কথা হয় ঈগলের পক্ষে প্রচার মাইকিং চালানো ইজিবাইকচালক আসাদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে তিনি মাহবুবুল আলমের পক্ষে ঈগল প্রতীকে ভোট প্রার্থনার রেকর্ড করা গান বাজিয়ে কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছেন। প্রতিদিন এক হাজার টাকার বিনিময়ে বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘোরেন।
আসাদুলের সঙ্গে কথা শেষ না হতেই সেখানে নৌকা প্রতীকের গান বাজাতে বাজাতে চলে আসে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান গাড়ি। নৌকার প্রচারকাজে নিয়োজিত ভ্যানচালক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কয়রা সদরে ভ্যান চালাই। দুপুরের খাওয়া শেষে নির্বাচনী মাইক নিয়া ঘুরি। নির্বাচনের এ-ই কয়দিন ভালোই ইনকাম হইছে।’
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, ‘প্রার্থীরা নিজেদের বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিতে সম্ভাব্য সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন। আসলে মানুষ এখন আর পুরোনো স্টাইলে প্রচারণা শুনতে চান না। নতুন কিছু যুক্ত করলে মানুষ তা শোনে। তাই গান বাজিয়ে প্রচারণায় মনোযোগ বেশি আকর্ষণ করে। চেনা সুরে গানের কথা পাল্টে সুরে-ছন্দে বলা হচ্ছে, অমুক ভাইকে ভোট দিন। তমুক ভাইয়ের বিকল্প নেই। কাকে ভোট দিলে কী ধরনের সুফল মিলবে, তা-ও গানে গানে দিব্যি বলে দেওয়া হচ্ছে। বেশ উপভোগ করছি।’