ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষে ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনায় পুলিশের মামলা, আসামি ৪৪৪

নিহত ফয়সাল মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের সংঘর্ষে ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৪৪৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সরাইল থানার উপপরিদর্শক তারিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটি করেন। এর আগে গতকাল রাতে সংঘর্ষের পরপরই উপজেলার কালীকচ্ছ বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

মামলায় ওই ১১ জনসহ ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে। এর আগে গতকাল রাত ৮টার দিকে উপজেলার সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়কের কালীকচ্ছ বাজারে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় ফয়সাল মিয়া (২২) নামের এক তরুণ ব্যবসায়ী নিহত হন। ফয়সাল মিয়া কালীকচ্ছ বাজারে ব্যবসা করতেন। তিনি উপজেলা সদরের পূর্ব কুট্টাপাড়া গ্রামের রকিম মিয়ার ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার ধরন্তী গ্রামের আকাশ মিয়ার (৩০) সঙ্গে কালীকচ্ছ বাজার এলাকায় সূর্যকান্দি গ্রামের তোফাজ্জল মিয়ার (২৫) কথা–কাটাকাটি হয়। গতকাল সন্ধ্যায় আকাশ মিয়া ও তাঁর লোকজন সূর্যকান্দি গ্রামের মামুন মিয়াকে (৪০) মারধর করে আহত করেন। এর জেরে গতকাল রাত ৮টার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা, দা-বল্লম ও ইটপাটকেল নিয়ে কালীকচ্ছ বাজার এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফয়সালকে উদ্ধার করে প্রথমে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন

তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ফয়সাল মিয়ার মামা ওসমান ফারুকীর (৩৫) দাবি, পুলিশের গুলিতে তাঁর ভাগনে নিহত হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা কালীকচ্ছ মনিরবাগ গ্রামের বাসিন্দা। আমরা কোনো পক্ষের নয়। গতকাল রাতে দুই গ্রামের ঝগড়া চলছিল। আমি আর আমার ভাগনেসহ কয়েকজন মিলে তখন মালামাল রক্ষার জন্য দোকান বন্ধ করছিলাম। মারামারি ছিল অনেক দূরে। পুলিশ গিয়েই এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশের গুলিতেই আমার ভাগনে মারা গেছে। আমরা এর বিচার চাই।’

তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শুধু বাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। এখানে ছররা গুলিও ছোড়া হয়নি। দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফারণের ঘটনা ঘটেছে। ককটেলের স্প্রিন্টারের আঘাতেই ফয়সাল মারা গেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা করেছে। তদন্তেই সব তথ্য বের হয়ে আসবে।

এদিকে গতকাল রাতে সংঘর্ষের সময় স্থানীয় সাংবাদিক মাসুদ মিয়া আহত হন। তিনি বর্তমানে বেসরকারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান চিকিৎসক আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে মাসুদের দেহ থেকে দুটি ছররা গুলি বের করা হয়েছে। তবে তাঁর দেহে আরও সাত থেকে আটটি গুলি এখনো আছে। এগুলো সময় নিয়ে পরে বের করা হবে। কারণ, এখন গুলি বের করতে গেলে অধিক রক্তক্ষরণের আশঙ্কা আছে।