বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির জন্য ছাত্রীকে কানে ধরে ২০০ বার ওঠবসের নির্দেশ, ৬১ বারের মাথায় অচেতন

প্রতীকী ছবি

জ্বর থাকায় টানা তিন দিন বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জয়া। চতুর্থ দিনের মাথায় কিছুটা সুস্থ বোধ করলে স্কুলে যায় সে। নাম ডাকার সময় হাজিরা খাতায় টানা তিন দিনের অনুপস্থিতি দেখতে পেয়ে শিক্ষক তাকে সামনে ডেকে নেন। এ সময় ওই ছাত্রীকে কানে ধরে ২০০ বার ওঠবস করার নির্দেশ দেন। ওই ছাত্রী অসুস্থতার কথা বললেও কাজ হয়নি। অসুস্থ শরীর নিয়েই কানে ধরে ৬১ বার ওঠবস করতেই অচেতন হয়ে যায় ওই ছাত্রী।

ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার সকাল ১০টায় নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার কামরাব উচ্চবিদ্যালয়ে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মামা মহসিন মিয়া আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতারুজ্জামান ও কম্পিউটার অপারেটর আসিফুল ইসলামকে বিবাদী করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তীব্র জ্বরের কারণে টানা তিন দিন স্কুলে যেতে পারেনি জয়া। জ্বর কিছুটা কমলে রোববার সকালে অসুস্থ শরীর নিয়েই স্কুলে যায় সে। প্রথম ক্লাসটি ছিল গণিত বিষয়ের। ওই ক্লাস করাতে আসেন কম্পিউটার অপারেটর আসিফুল ইসলাম। তিনি রোলকল করার সময় জয়া উপস্থিতি জানান দিলে ওই শিক্ষক দেখেন জয়ার আগের তিন দিন হাজিরা নেই। অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে জয়া জ্বর থাকার বিষয়টি জানায়। পরে তিনি জয়াকে ২০০ বার কানে ধরে ওঠবস করার নির্দেশ দেন।

অসুস্থ শরীর নিয়েই জয়া ৬০ বার ওঠবস করে। এর মধ্যেই কয়েক দফা অসুস্থতার কথা জানিয়ে নিষ্কৃতি চায়। আসিফুল ইসলাম তাতে রাজি হননি। আরও পাঁচবার ওঠবস করতে বলেন। আবার ওঠবস করতে গিয়ে ৬১ বারের মাথায় জয়া অচেতন হয়ে পড়ে। এ সময় সহপাঠীরা তার চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দিলে জ্ঞান ফেরে।

জয়ার মামা মহসিন মিয়া বলেন, ঘটনার দিন জয়াকে ২০০ বার কানে ধরে ওঠবস করার নির্দেশ দেওয়া ব্যক্তি বিদ্যালয়ের শিক্ষকই নন। আসিফুল ইসলামের নামের ওই ব্যক্তি বিদ্যালয়টির কম্পিউটার অপারেটর। নিয়মিত শ্রেণিশিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেদিন প্রথম ক্লাসটি (গণিত) করতে গিয়েছিলেন তিনি।

মহসিন আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের কাছে দুদিন ধরে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাইনি। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমার ভাগনির সঙ্গে ঘটে যাওয়া এ অন্যায়ের বিচার চাই আমি।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ‘জয়াকে কানে ধরে ওঠবস করতে বলার সময়ও সে অসুস্থ থাকার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু স্যার তাকে বিশ্বাস করেননি। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে গেলে আমরা পানি এনে তার চোখেমুখে ছিটিয়ে দেওয়ার পর জ্ঞান ফেরে।’

অভিযুক্ত শিক্ষক আসিফুল ইসলামের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ। ফলে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘অসুস্থ বলার পরও ওই শিক্ষার্থীকে কানে ধরে ওঠবস করার নির্দেশ দেওয়া আসিফুল ইসলামের ঠিক হয়নি। অভিযোগ পাওয়ার পরই আমি শাস্তি হিসেবে তাঁকে ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত রেখেছি, বলেছি ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে আসতে। যত দূর জানি, তিনি গতকাল সন্ধ্যার দিকে দুঃখপ্রকাশ করেও এসেছেন।’

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মামার অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন, অসুস্থ ছাত্রীকে ২০০ বার কানে ধরে ওঠবস করানোর নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।