বরিশালের সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী ও শিক্ষানুরাগী এস এম ইকবাল মারা গেছেন

এস এম ইকবাল
ছবি: সংগৃহীত

বরিশালের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এস এম ইকবাল (৭৯) মারা গেছেন। বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। বুধবার অসুস্থতা বাড়লে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই তিনি মারা যান।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় এস এম ইকবালের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর লাশ বরিশাল প্রেসক্লাবের সামনে রাখা হবে। এস এম ইকবাল ১৯৪৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার লবনসাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ শামসুল হুদা এবং মায়ের নাম ফরিদা বেগম। 

স্থানীয় সাংবাদিকেরা বলেন, সত্তরের দশক থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা ও বরিশাল থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন এস এম ইকবাল। বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের বার্তার সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সর্বশেষ বরিশালের আজকাল পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকার সম্পাদক পদে ছিলেন। তিনি বরিশাল প্রেসক্লাবের আটবারৈল সভাপতি ও পাঁচবারের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাংবাদিকতায় মাইনুল হাসান স্মৃতিপদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই সাংবাদিক।

গণমাধ্যমকর্মীরা আরও বলেন, ব্রজমোহন কলেজে পড়ার সময় এস এম ইকবাল শক্তিমান চলচ্চিত্রনির্মাতা সাদেক খানের চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থা লুব্ধক ফিল্মে যোগ দেন। ‘কারওয়া’, ‘নদী ও নারী’, ‘আকাশের রং নীল’, ‘ক্যায়সে কাহু’ নামক চলচ্চিত্রে কাজ করেন সহকারী প্রোডাকশন কন্ট্রোলার হিসেবে। এফডিসির সেই সময়ের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র সম্পাদক আবদুর রহমানের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

বরিশালে এস এম ইকবাল গড়ে তোলেন সামাজিক সংগঠন বরিশাল যুব সংঘ। নাটক রচনা-মঞ্চায়ন, আবৃত্তি, খেলাধুলাসহ সব সামাজিক ক্ষেত্রে কাজ করত এ যুব সংঘ। সাংবাদিকতা ও সমাজসেবার পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন তিনি। জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’, ‘সুরঞ্জনা’, ‘সাতটি তারার তিমির’; সুকান্তের ‘ঘুম নেই’ ইত্যাদি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন তিনি। এ ছাড়া ‘ছোটদের নজরুল’, ‘ছোটদের রবীন্দ্রনাথ’, ‘ছোটদের শরৎ চন্দ্র’সহ প্রায় অর্ধশত বই লিখেছেন ইকবাল।

বর্ণাঢ্য জীবনে জনপ্রতিনিধির দায়িত্বও পালন করেন ইকবাল। ১৯৮৫ সালে বানারীপাড়া উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বানারীপাড়া উপজেলায় বাইশারীতে একটি স্কুল ও একটি কলেজ নির্মাণ করেন। এস এম ইকবাল অমর একুশের গান হিসেবে খ্যাত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’-এর সুরকার সংস্কৃতিকর্মী ও স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের নামে ১৯৭২ সালে বরিশালে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া ২৮টি সংগঠনের জোট বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের দুইবার সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।