মাগুরায় সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৩ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের মামলা

স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর রাস্তায় ভাঙা ইটের টুকরা পড়ে থাকতে দেখা যায়। বুধবার দুপুরে মাগুরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

মাগুরায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির তিন শতাধিক নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সদর থানায় মামলাটি করেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি বারিউল ইসলাম ওরফে রিয়াদ। মামলায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভীতি সৃষ্টি ও হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

ছাত্রলীগ নেতার করা ওই মামলায় আসামি হিসেবে ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি আছেন ১৫০ থেকে ২০০ জন। তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে তাঁরা বেশির ভাগই বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে সদর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আকতার হোসেন আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম, আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে ছাত্রলীগের এক নেতা মামলা দিয়েছেন। অথচ পুলিশের সামনে আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল, গুলি ছুড়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রসহ সেই ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ আমাদের নামেই মামলা দিচ্ছে, আবার পুলিশ সেই মিথ্যা মামলা নিচ্ছেও।’

আরও পড়ুন

বিএনপি নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মাগুরা শহরের ইসলামপুরপাড়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি প্রতিনিধি সভা চলছিল। সেখানে যাওয়ার পথে তাঁদের একটি মিছিলের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। তবে ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল থেকে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হলে তাঁরা প্রতিরোধ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে চৌরঙ্গী মোড় থেকে মাগুরা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ফটকের সামনে কলেজ রোড এলাকায়। এলাকাটি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ১০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলটি আসছিল জেলা জজ আদালতের দিক থেকে। মিছিলের একটি অংশ চৌরঙ্গী মোড় পার করে সৈয়দ আতল আলী সড়কে প্রবেশ করেছিল। এমন সময় ছাত্রলীগের একটি দল লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে মিছিলে হামলা চালায়। এতে মিছিলটি কিছুক্ষণের জন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের কলেজ রোডের দিকে ধাওয়া দেন। এ সময় কলেজ রোডের দিক থেকে একটি গুলির শব্দ পাওয়া যায়। পরে গুলির খোসাও দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হামিদুল ইসলাম বুধবার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘বিএনপির একটি মিছিল যাচ্ছিল। এ সময় চৌরঙ্গী মোড়ে আমাদের ১০-১২ জন কর্মীকে লক্ষ্য করে মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছোড়ে। ওরা এ সময় প্রতিরোধ করেছে। জন্মাষ্টমী ছিল, এ কারণে আমরা কোনো হুড়-হাঙ্গামা করিনি। নেতা-কর্মীদের নিয়ে আমরা সরে এসেছি।’

বিএনপির দাবি, ওই দিন ছাত্রলীগের হামলায় জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম, শ্রীপুর সদর ইউনিয়ন কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাহারুল ইসলাম এবং সদর থানা কৃষক দলের আহ্বায়ক বি এম পলাশসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ওই দিন ঘটনার পর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তাঁদের কেউ আহত হননি। তবে মামলার এজাহারে বাদী নিজেকে বিএনপি নেতাদের হামলায় আহত বলে উল্লেখ করেছেন।

আরও পড়ুন

এদিকে ঘটনার পর বুধবার রাতে ফেসবুকে অস্ত্র হাতে এক যুবকের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি কলেজ রোডের একটি বিপণিবিতান থেকে ধারণ করা। এতে দেখা যায়, মাগুরা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে এক যুবক অস্ত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। তাঁর মাথায় ক্যাপ ও মুখে মাস্ক ছিল। তিনি ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের দাবি। ওই যুবক ছাত্রলীগের কর্মী কি না, জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা কার বা কবের ছবি, সেটা স্পষ্ট নয়।’

জানতে চাইলে মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, বুধবারের ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের এক নেতা মামলা করেছেন। তবে এই মামলায় এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার হয়নি। আর অস্ত্রধারী ওই যুবকের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।