ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাগর উত্তাল, কিনারে ফিরছে মাছ ধরার ট্রলার

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাগর উত্তাল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় ফিরে আসছে মাছধরা ট্রলার। আজ শুক্রবার বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণকেন্দ্র এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হতে শুরু করেছে। সময় যত গড়াচ্ছে ততই সাগর আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সাগর অশান্ত হয়ে ওঠায় আজ শুক্রবার বিকেল থেকে গভীর সমুদ্রে যাওয়া মাছ ধরার ট্রলারগুলো উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে। বরগুনার পাথরঘাটায় ফিরে ট্রলারের জেলেরা এই তথ্য দিয়েছেন।  

সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় শুক্রবার পাঁচ শতাধিক ট্রলার কিনারে নিরাপদে ফিরে এসেছে। এসব ট্রলার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ছাড়াও চরদুয়ানি, বরগুনার নলীবন্দর, নিশানবাড়িয়া, তালতলী, বরগুনা সদরের গুলিশাখালী এবং পটুয়াখালীর মহিপুর, আলীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।

জেলেরা বলেছেন, সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় শুক্রবার পাঁচ শতাধিক ট্রলার কিনারে নিরাপদে ফিরে এসেছে। এসব ট্রলার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ছাড়াও চরদুয়ানি, বরগুনার নলীবন্দর, নিশানবাড়িয়া, তালতলী, বরগুনা সদরের গুলিশাখালী এবং পটুয়াখালীর মহিপুর, আলীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু ট্রলার সুন্দরবনের গহিনেও আশয় নিয়েছে।  

শুক্রবার বিকেলে পাথরঘাটায় অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের  (বিএফডিসি) মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এফবি তরিকুল-৪ ও এফবি আল্লাহর দান-২ সহ অন্তত ১০টি ট্রলারের মাঝি ও জেলেদের সঙ্গে কথা হয়।  

মাছ ধরার ট্রলারের জেলেরা বলেন, শুক্রবার দুপুর থেকেই বঙ্গোপসাগর উত্তাল হতে শুরু করে। প্রথমে জেলেরা মনে করেছিলেন এটা স্বাভাবিক ঘটনা, হয়তো কিছু সময় পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা স্বাভাবিক না হয়ে বেলা যত গড়াতে থাকে ততই সাগর রুদ্ররূপ ধারণ করতে থাকে। ফলে অনেক জেলে দ্রুত জাল টেনে কিনারের দিকে ফিরে আসেন। তবে এখনো অনেক জেলে ট্রলার নিয়ে সাগরে অবস্থান করছেন।

এফবি তরিকুল-৪ ট্রলারের মাঝি চান মিয়া ও ওই ট্রলারের জেলে আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ট্রলার নিয়ে আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে পাঁচটায় পাথরঘাটায় ফিরেছি। ফিরে আসার আগে সাগর খুবই উত্তাল অবস্থায় দেখে এসেছি। আমরা অবস্থা বেগতিক দেখে আগেভাগেই কিনারে ফিরেছি। এই অবস্থায় সাগরে অবস্থান করা দুরূহ হয়ে পড়ছিল। তবে এখনো অনেক ট্রলার সাগরে বৈরী অবস্থার মধ্যে মাছ ধরার জন্য অবস্থান করছে।’

এফবি আল্লাহর দান-২ নামে একটি ট্রলারের মাঝি কবির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি আবুল হোসেন ফরাজী আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, গভীর সাগরে জেলেদের কাছে মূলত ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা পৌঁছাতে বেশ বিলম্ব হয়। তবে ট্রলারের মাঝি ও জেলেরা  সাগরের পানিতে হাত দিয়ে পানির তাপমাত্রা বেশি হলে অনুমান করে তীরে ফেরা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেল থেকে ট্রলার তীরে ফিরতে শুরু করেছে। আজ বিকেল পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার তীরে ফিরেছে। তবে পাথরঘাটা, পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, বাগেরহাট, রায়েন্দা, শরণখোলা ও চট্টগ্রামের বেশ কিছু মাছ ধরা ট্রলার সুন্দরবন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। ওই সব এলাকায়  ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

সাগরে অবস্থানরত ট্রলারগুলো যাতে নিরাপদে কিনারে ফিরে আসে এবং নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য আমরা মৎস্যজীবী সমিতি ও   জেলেদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি
সুফল চন্দ্র গোলদার, ইউএনও, পাথরঘাটা, বরগুনা

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, দূরবর্তী এলাকার কিছু ট্রলার দুর্যোগ দেখা দিলে সুন্দরবনে আশ্রয় নেয়। এবারও অনেক ট্রলার সুন্দরবনে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ বেলা সাড়ে তিনটার আবহাওয়ার ১১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। দেশের চার বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত উঠিয়ে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাগরে অবস্থানরত ট্রলারগুলো যাতে নিরাপদে কিনারে ফিরে আসে এবং নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য আমরা মৎস্যজীবী সমিতি ও   জেলেদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।’