৬ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি

গত বছর নদী খননের সময় সাঁকো ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এলাকার মানুষ আবার সাঁকো তৈরি করেছেন।

বাঁশের সাঁকো দিয়ে কপোতাক্ষ নদ পার হয় ছয় গ্রামের মানুষ। সম্প্রতি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার জলিলপুর-যুগীহুদা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

৬টি গ্রামে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস। কপোতাক্ষ নদ পার হয়ে তাদের পাশের বাজারে যেতে হয়। ওই বাজার এলাকায় রয়েছে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাঁশের সাঁকো পার হয়ে গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীদের সেখানে যেতে হয়। গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও তা পূরণ হয়নি। এর ফলে তাদের ভোগান্তিরও শেষ নেই।

মাঝেমধ্যেই পত্রিকায় দেখি, অপ্রয়োজনীয় সেতু। আর আমাদের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও সেতু নির্মাণ হচ্ছে না।
নুর আলী, স্থানীয় বাসিন্দা

এ অবস্থা ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা শহরের উত্তর পাশের গ্রামগুলোর। জলিলপুর-যুগিহুদা গ্রামের মধ্যে কপোতাক্ষ নদে রয়েছে সাঁকোটি।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। আগে নৌকায় পার হতেন। সাঁকো তৈরি হয়েছিল প্রায় ২৫ বছর আগে। গত বছর নদ খননের সময় সেই সাঁকো ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এলাকার মানুষ নিজেদের অর্থায়নে আবার সাঁকো তৈরি করেছেন।

মহেশপুর উপজেলা শহরের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। এই নদের দুই পারে রয়েছে জলিলপুর, যুগিহুদা, কদমতলা, সড়াতলা, নিমতলা ও বেড়েরমাঠ গ্রাম। এর মধ্যে যুগিহুদা গ্রামটির তিন পাশ ঘিরে রেখেছে কপোতাক্ষ নদ। জলিলপুর মহেশপুর পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত। আর ওই গ্রামগুলো ফতেহপুর ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে।

অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুর জন্য ৩ দফা প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সৈয়দ শাহরিয়ার, উপজেলা প্রকৌশলী

যুগিহুদা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, এসব গ্রামের মানুষকে দৈনন্দিন কাজের জন্য জলিলপুর বাজারে যেতে হয়। এই বাজারে রয়েছে একটি কলেজ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মেয়ে ও ছেলেদের পৃথক দুটি মাদ্রাসা। শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এই বাঁশের সাঁকো পারাপার হয়।

যে স্থানে বর্তমানে সাঁকো রয়েছে, তার দুই পাশে তিন কিলোমিটার দূরে সেতু রয়েছে। সেতুর পাশের লোকজন উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু এই ছয় গ্রামের মানুষকে মহেশপুর বা জলিলপুর শহরে যেতে হলে কমপক্ষে চার কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে।

মহেশপুর পৌর মহিলা কলেজের শিক্ষক ও যুগিহুদা গ্রামের বাসিন্দা এম এ আসাদ বলেন, আগে গ্রামের মানুষ কষ্ট করে নৌকায় পার হতো। পারাপারের খাজনা হিসেবে অনেকের মাসিক চুক্তিও ছিল। ৯০-এর দশকে এলাকার মানুষ নিজেদের উদ্যোগে সাঁকো তৈরি করেন। তখন থেকেই সাঁকো দিয়ে সবাই যাতায়াত করে। দুই বছরের বেশি সাঁকো ভালো থাকে না। তাই দুই বছর পরপর নতুন করে সাঁকো তৈরি করতে হয়। অনেক সময় জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েও পার হতে হয়।

এম এ আসাদ আরও বলেন, গত বছর কপোতাক্ষ নদ খনন করা হয়েছে। এই খননের সময় বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে দেওয়া হয়। তখন মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। গত ডিসেম্বরে তাঁরা আবার নতুন করে সাঁকো তৈরি করেন।

গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, কেউ সাঁকোর এপার থেকে ওপারে যাচ্ছেন। আবার কেউ ওপার থেকে এপারে আসছেন। শেফালী বেগম নামের এক বৃদ্ধা অনেক সময় ধরে সাঁকো পার হলেন। তিনি বলেন, বয়স হয়ে গেছে। সাঁকো পার হতে ভয় হয়। শেষ বয়সে এত কষ্ট করা যায় না।

নুর আলী নামের আরেক পথচারী বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই পত্রিকায় দেখি, অপ্রয়োজনীয় সেতু। দুই পাশে রাস্তা নেই, মাঝখানে সেতু। আর আমাদের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও সেতু নির্মাণ হচ্ছে না। ছয় গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন তেমন কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা একটাই, চলাচলে বাঁশের সাঁকো।’

মহেশপুর পৌরসভার মেয়র আবদুল রশিদ খান বলেন, পৌরসভার পাশেই ওই গ্রামগুলোর অবস্থান। সেতুটি খুবই প্রয়োজন। শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। জলিলপুরে একটি সেতু হবে, এটা তাঁদের অনেক দিনের প্রত্যাশা।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ শাহরিয়ার আকাশ বলেন, তাঁরা ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুর জন্য ৩ দফা প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।