পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য যেতে হয় ঢাকায় 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পঙ্গু রোগীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুযোগ নেই। গুরুতর অবস্থার রোগীদের পাঠানো হয় ঢাকায়।

ময়মনসিংহ বিভাগ

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চর পুবাইল গ্রামের তরুণ শহীদুল ইসলাম ও মো. আলমগীর গত বছরের জুলাই মাসে এক প্রতিবেশীর হামলার শিকার হন। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ময়মনসিংহে ভালো চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁদের নেওয়া হয় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। শহীদুল আর আলমগীর এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। এখনো নিয়মিত তাঁদের যেতে হয় সেখানে।

শহীদুলের বাবা ও আলমগীরের মামা খোয়াজ আলী তাঁদের চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করছেন। খোয়াজ আলী বলেন, একদিকে ছেলে আর ভাগনের চিকিৎসা, অন্য দিকে মামলার জন্য ঢাকা ও ময়মনসিংহে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে তাঁর ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পঙ্গু রোগীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুযোগ নেই। হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগে পঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রাথমিক অবস্থায় বহির্বিভাগেও অনেকে চিকিৎসা নেন। পঙ্গু রোগীদের অস্ত্রোপচার করা হলেও বিশেষ জুতা তৈরি বা কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ নেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গুরুতর অবস্থার রোগীদের পাঠানো হয় ঢাকায়।

১৫ মার্চ বিশ্ব পঙ্গু দিবস পালন করা হবে। তবে পঙ্গু দিবস উপলক্ষে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের উপপরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, তাঁরা মন্ত্রণালয় থেকে পঙ্গু দিবস বিষয়ে কোনো ধরনের নির্দেশনা পাননি। ফলে তাঁদের কোনো কর্মসূচি নেই। 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অর্থোপেডিকস বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। তাঁদের বেশির ভাগই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার। যেসব রোগীর উন্নত চিকিৎসার দরকার হয়, তাঁদের পাঠানো হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে।

হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মতিউর রহমান বলেন, মানুষের শরীরের কোনো অঙ্গের কর্মক্ষমতা না থাকলে, ওই মানুষকেই পঙ্গু বলা যেতে পারে। সেটি জন্মগতভাবে হতে পারে, আবার জন্মের পর যে কোনো সময়ে হতে পারে। সাধারণ সড়ক দুর্ঘটনা, আঘাত এবং প্রতিহিংসামূলক আচরণের কারণে দেশের মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেন। 

অধ্যাপক মতিউর রহমান আরও বলেন, এ দেশের অনেক মানুষ আঘাত পেলে কবিরাজের কাছে বা ঝাড়ফুঁক করান। এটি একটি বড় কারণ পঙ্গুত্বের। কবিরাজি চিকিৎসা মোটেও বিজ্ঞানসম্মত নয়। এ ব্যাপারে মানুষের সচেতন হতে হবে। তাহলে অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করা থেকে রক্ষা পাবেন। 

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় সরাসরি পঙ্গুদের জন্য বিশেষ কোনো সরকারি সেবা নেই। মোট ১২ রকমের প্রতিবন্ধীর জন্য রয়েছে সরকারি সেবা। ময়মনসিংহ জেলায় বর্তমানে মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮২ জন তালিকাভুক্ত প্রতিবন্ধী রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ হাজার ২২৭ জনের জন্য সরকার মাসিক ভাতা নিশ্চিত করেছে। 

সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, ১ লাখ ১৮ হাজার ৪২ জন প্রতিবন্ধীর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় শারীরিক প্রতিবন্ধী বা পঙ্গুর সংখ্যা ৬০ হাজার ৬১৫। তাঁদের প্রতি মাসে ৮৫০ টাকা করে ভাতা দেয় সরকার।

জেলা সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিভাগীয় শহর হিসেবে ময়মনসিংহে পঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার যথেষ্ট সুযোগ নেই। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও গাজীপুর, সুনামগঞ্জ এমনকি কুড়িগ্রাম জেলা থেকেও রোগীরা আসে। কাজেই এখানে পঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সুযোগ বাড়ানো উচিত। পাশাপাশি ময়মনসিংহে একটি জেনারেল হাসপাতাল হওয়া জরুরি। তাঁরা ময়মনসিংহে একটি জেনারেল হাসপাতাল করার প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেযে