অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০

সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনার সুজানগর উপজেলায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকালে উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কাদুয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার কাদুয়া গ্রামের তাজু প্রামাণিক (৪৫), আলাউদ্দিন প্রামাণিক (৫০), আলাউদ্দিনের স্ত্রী হেলেনা খাতুন (৪০), ছেলে আশিকুর রহমান (২১), একই গ্রামের মাসুম শেখ (৩৪), শরিফুল ইসলাম (৩০), সাদ্দাম হোসেন (৩০) ও দেলোয়ার হোসেন (৩৫)। তাঁরা সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল ওহাবের সমর্থক।

আহত অন্য ব্যক্তিরা হলেন কাদুয়া গ্রামের সলিম প্রামাণিক (৩৫), ইসিম প্রামাণিক (৪০), সুমন প্রামাণিক (৩৮), মনির উদ্দিন প্রামাণিক (৬৩) ও উজ্জ্বল কাজী (৪০)। তাঁরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামানের সমর্থক। আহত বাকি ব্যক্তিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নয়জনকে সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পাঁচজনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালে আবদুল ওহাব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং শাহীনুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই থেকে দুজনের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এলাকায় বালুমহাল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড এবং বাজার দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। কিছুদিন আগে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুজনেই চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ আরও বাড়ে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। নির্বাচনে আবদুল ওহাবের কাছে শাহীনুজ্জামান পরাজিত হন। নির্বাচনের পর আরও কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় একে অপরের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন তাঁরা।

শাহীনুজ্জামান অভিযোগ করেন, নির্বাচনের পর থেকেই আবদুল ওহাবের লোকজন তাঁর লোকজনের ওপর হামলা চালাচ্ছেন, মারধর করছেন। গতকাল শুক্রবার মানিকহাট এলাকায় তাঁর এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘আমি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।’

অভিযোগের বিষয়ে আবদুল ওহাব বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক কোনো বিষয় নয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সুজানগরে যা হচ্ছে, শাহীনুজ্জামান সেটা আমার ওপর চাপাতে চাইছেন। নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা বলছেন।’

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, আবদুল ওহাবের আগে শাহীনুজ্জামান উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। তখন থেকে কাদুয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডটি শাহীনুজ্জামানের লোকজনের দখলে ছিল। এবার উপজেলা নির্বাচনে শাহীনুজ্জামান পরাজিত হওয়ার পর থেকে অটোরিকশা স্ট্যান্ডটি সভাপতি আবদুল ওহাবের লোকজন দখলে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ ও উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এর জেরে আজ সকাল ৯টার দিকে আবদুল ওহাবের লোকজন অটোরিকশা স্ট্যান্ডটি দখল নিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, লাঠিসোঁটা, দা, বঁটি নিয়ে হামলার ঘটনাও ঘটে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দীর্ঘ বিরোধের জেরেই সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।