দেশে ফেরা হলো না মোজাম্মেলের

সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রবাসী মোজাম্মেল মৃধা (ডানে) ও তাঁর শ্যালক সাগর জমাদ্দার
ছবি: সংগৃহীত

ছোট্ট নাতিকে দেখতে স্ত্রীকে দেশে ফেরার কথা জানিয়েছিলেন সৌদিপ্রবাসী মোজাম্মেল মৃধা (৪৫)। স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, এবার কাউকে না জানিয়ে দেশে ফিরবেন। হঠাৎ দেশে ফিরে সবাইকে সারপ্রাইজ দেবেন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা সব এলোমেলো করে দিয়েছে।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে মদিনায় রাসুল (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মোজাম্মেলসহ দুই বাংলাদেশি প্রবাসী নিহত হন।

নিহত অন্য ব্যক্তি হলেন সাগর জমাদ্দার (২৫)। সম্পর্কে তিনি মোজাম্মেলের শ্যালক। মোজাম্মেল পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছৈলাবুনিয়া গ্রামের মৃত আজিজ মৃধার ছেলে। আর সাগর বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের বটতলা এলাকার মোতাহার জোমাদ্দারের ছেলে।

মোজাম্মেলের স্বজনেরা জানান, মোজাম্মেল ও সাগর গত বৃহস্পতিবার সৌদির আলগাছিমের উনাইয়া থেকে মদিনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করতে যান। রওজা জিয়ারত শেষে গতকাল রাতে মক্কার উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তাঁদের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁরা নিহত হন।

সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রবাসী মোজাম্মেলের বাড়িতে মাতম। রোববার মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছৈলাবুনিয়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে দুর্ঘটনার মোজাম্মেলের বাড়িতে মাতম চলছে। একসঙ্গে স্বামী ও ভাইকে হারিয়ে শোকে পাথর মোজাম্মেলের স্ত্রী রুবিনা ইয়াসমিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মোজাম্মেল দীর্ঘদিন ধরে সৌদিতে কর্মী হিসেবে ছিলেন। কয়েক দিন আগে নিজের জমানো টাকা ও ধারদেনা করে সেখানে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরু করেন। আট বছর তিনি দেশে আসেননি। দুই মাস আগে তাঁর বড় মেয়ের একটি সন্তান হয়। সেই নাতিকে দেখতে তাঁর বাড়িতে আসার কথা ছিল। এ জন্য কেনাকাটাও করে রেখেছিলেন। তবে কবে ফিরবেন সেটা জানাননি।

রুবিনা ইয়ামমিন আরও বলেন, কয়েক দিন আগে ফোন করে জানান, এবার দেশে ফিরে সবাইকে সারপ্রাইজ দেবেন। হঠাৎ দেশে ফিরে এক দিন দরজায় কড়া নেড়ে বলবেন, ‘দরজা খোলো, মুসাফির এসেছে।’ কিন্তু সারপ্রাইজ দেওয়ার আগেই দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে জানতে পারেন, তিনি ওমরাহ পালন শেষে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সঙ্গে ছোট ভাই সাগরও মারা গেছেন।

আরও পড়ুন

মোজাম্মেল মৃধা ও তাঁর শ্যালক সাগর জোমাদ্দার সৌদি আরবের আলগাছিমের উনাইয়ায় থাকতেন। লাশ বর্তমানে সৌদি আরবের একটি সরকারি হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে তাঁর স্বজনেরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুর রহমান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রথম আলোকে বলেন, নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ দেশে আনার ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।