সাভারে পরিবারের সদস্যদের অচেতন করে হাত-পা বেঁধে কিশোরীকে ধর্ষণ, মালামাল লুট

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

ঢাকার সাভারে গভীর রাতে ঘরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের অচেতন করে হাত-পা বেঁধে এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি ধর্ষণকারীরা নগদ টাকা, মোবাইল লুট করে নিয়ে গেছেন। ভুক্তভোগী ওই কিশোরীকে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে এবং তার বাবা-মাকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে গতকাল মঙ্গলবার রাতে মামলা করা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী পরিবারটির দাবি, স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্যের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

গত সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নের লুটের চর এলাকায় এ ধর্ষণ ও মালামাল লুটের ঘটে। ধর্ষণের শিকার কিশোরী নবম শ্রেণির ছাত্রী। ওই কিশোরীর বড় ভাই আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার রাতের খাবার খাওয়ার পর তিনি বারান্দায় বেরিয়ে মুঠোফোনে কথা বলার একপর্যায়ে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। এরপর শোনেন, তাঁর বাবাও অসুস্থবোধ করছেন। পরে তাঁর মাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় দেখেন, ছোট বোন তার কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েছে। একপর্যায়ে তিনিও গভীর ঘুমে তলিয়ে যান। সকালে প্রতিবেশীরা তাঁকে ডেকে তোলেন। তখন বোনের কাছ থেকে জানতে পারেন, রাতে গ্রিল কেটে তিনজন ঘরে ঢুকেছিলেন। তাঁরা তাঁর কিশোরী বোনের হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা গুঁজে ধর্ষণ করেছেন। এ সময় তাঁর বোন তাঁকে ডাকাডাকি করেছিল, কিন্তু ঘুমের কারণে কেউ কিছু শুনতে পাননি। ধর্ষণকারীরা দুটি মুঠোফোনসহ টাকা ও বেশ কিছু স্বর্ণের অলংকার লুট করে নিয়ে গেছে।

স্থানীয়ভাবে তাঁরা ক্ষমতাশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। ওরাই আমার বোনের জীবনটা নষ্ট করে দিল। মঙ্গলবার রাতে সাভার মডেল থানায় মামলা করেছি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
ভুক্তভোগী কিশোরীর ভাই

কিশোরীর ভাই বলেন, ‘ওরা আমার বোনকে নির্দয়ভাবে হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা দিয়ে ধর্ষণ করেছেন। আজ (বুধবার) সকালেও বোনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। কিছুই বলছে না। আমার বোনের সঙ্গে যারা এমন করছেন, আমি তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

কিশোরীর ভাই অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশে সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহর জমি রয়েছে। তিনি আমাদের জমির বেশ কিছু অংশ দখল করে নেন। আমরা এর প্রতিবাদ করি। এ বিষয়ে মামলাও করা হয়। এর পর থেকে তিনি এবং তাঁর ছেলে বিভিন্ন সময়ে আমাদের হত্যার হুমকি দেন। মা–বাবাকে বিভিন্ন সময়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করেছেন। স্থানীয়ভাবে তাঁরা ক্ষমতাশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। ওরাই আমার বোনের জীবনটা নষ্ট করে দিল। মঙ্গলবার রাতে সাভার মডেল থানায় মামলা করেছি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘অযথাই আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের কোনো জমি দখল করা হয়নি। একাধিকবার জমি মেপে বিষয়টির সমাধানও করা হয়েছে। এখন আমার, আমার ছেলে ও দুই ভাইয়ের নামে ধর্ষণের অভিযোগ দিচ্ছে। আমি চাই বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আমরা সহযোগিতা করব। আমার বাসায় সিসিটিভি ফুটেজ আছে। সেটি দেখে আমার ছেলে কখন বাসায় এসেছে, কখন বের হয়েছে, সেটি যাচাই করা হোক।’

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাকুর্তা ইউনিয়নে পরিবারের সবাইকে অচেতন করে এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও মালামাল লুটের ঘটনায় তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারে আমরা কাজ করছি।’