পদ্মা নদীর অভয়াশ্রমে ইলিশ শিকার

এসব মাছ সুরেশ্বর, দুলারচর, চেয়ারম্যান স্টেশন বাজার নরসিংহপুরসহ নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন হাটবাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। 

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করা হচ্ছে। গত রোববার শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের দুলারচর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার ইলিশের অভয়াশ্রম। ছোট ইলিশ (জাটকা) বেড়ে ওঠার জন্য দুই মাস ওই অভায়াশ্রমে জাল ফেলা নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য বিভাগ। তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সেখানে মাছ শিকার করা হচ্ছে। আর ওই জাটকা ৬০০–৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে শরীয়তপুরের হাটবাজারেই।

জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, পদ্মা ও মেঘনা নদীবেষ্টিত এলাকা শরীয়তপুর। ওই দুটি নদীর ৭১ কিলোমিটার অংশ রয়েছে জেলাটিতে। নড়িয়া উপজেলার ৫ কিলোমিটার ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১৫ কিলোমিটার মোট ২০ কিলোমিটার এলাকা ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে মৎস্য বিভাগ। মা ইলিশ ডিম দেওয়ার পর ওই অভয়াশ্রমে তা বেড়ে ওঠে। ইলিশ রক্ষায় মৎস্য বিভাগ ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ওই অভায়াশ্রমে সব ধরনের মাছ শিকার ও জাল ফেলা বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন হাটবাজারে ও জেলেপল্লিগুলোতে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে।

কিন্তু মৎস্য বিভাগের ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করে নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর থেকে ভেদরগঞ্জের তারবনিয়া পর্যন্ত পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করছেন জেলেরা। দিনে-রাতে সব সময়ই মাছ শিকার করা হয়। জেলেরা ওই স্থান থেকে জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করেন। ওই মাছ সুরেশ্বর, দুলারচর, চেয়ারম্যান স্টেশন বাজার নরসিংহপুরসহ নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন হাটবাজারে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। 

■ নৌকা নিয়ে নদীতে জাল ফেলছেন জেলেরা। একেকটি নৌকায় ৮ থেকে ১০ জন করে জেলে আছেন। 

■ দুই ঘণ্টা পরপর জাল টেনে নৌকায় মাছ তোলা হচ্ছে। 

গত রোববার সুরেশ্বর লঞ্চঘাট থেকে ভেদরগঞ্জের দুলারচর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে নদীতে জাল ফেলছেন জেলেরা। একেকটি নৌকায় ৮ থেকে ১০ জন করে জেলে আছেন। তাঁরা জাল ফেলার পর প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর জাল টেনে নৌকায় মাছ তুলছেন। জেলেরা ওই মাছ ককশিটে বরফ দিয়ে মাছ মজুত করছেন। তাঁরা ওই মাছ নদীর তীরবর্তী বাজারে বিক্রি করেন।

জেলে রাহাত হোসেন ৭ জেলেকে নিয়ে বলেন, ‘এখন বাজারে মাছের খুব চাহিদা। তাই নদীতে আসছি মাছ শিকার করতে। নদীতে যখন পুলিশ থাকে, তখন আমরা লুকিয়ে থাকি। তারা চলে গেলে আবার জাল ফেলি। আমাদের আর কোনো কাজ নেই, তাই নিয়ম ভেঙে মাছ ধরতে আসা।’

তারাবনিয়া এলাকার আরেক জেলে বলেন, সারা বছর নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সংসারের অভাবের কারণেই নদীতে নামতে হয়। বিকল্প কোনো কাজ নেই। ৪ মাস ৪০ কেজি করে চাল দেয়। তা দিয়ে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ, সংসারের কোনো খরচ চালানো যায় না।

অভয়াশ্রম থেকে শিকার করা জাটকা প্রতিদিন ভোরে সুরেশ্বর, দুলারচরসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়। মাছ ব্যবসায়ীরা জেলেদের কাছ থেকে ওই জাটকা সংগ্রহ করে জেলা সদরসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছেন। এসব মাছ ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা করে প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। জেলা সদরের পালং বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, জাটকা বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন মহলে টাকা দিতে হয়। মাঝেমধ্যে সরকারি কর্মকর্তারা অভিযানে আসেন। তখন জাটকা সরিয়ে ফেলেন।

মৎস্য বিভাগ জানায়, শরীয়তপুরে ৩২ হাজার জেলে রয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিবন্ধিত জেলে আছেন ২৬ হাজার। নিষেধাজ্ঞা চলার সময় ১৫ হাজার ৪৬৫ জন জেলেকে খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৪ মাস প্রত্যেক জেলেকে মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ শিকার করলে মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইনে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উভয় দণ্ড দেওয়ারও বিধান রয়েছে।

নৌ পুলিশের সুরেশ্বর ফাঁড়ির পরিদর্শক হযরত আলী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় নদীতে অভিযান চালাই। তখন জেলেরা পালিয়ে যান। আমরা নদী থেকে চলে এলে তাঁরা আবার নদীতে নামেন।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ নিয়ে নদীতে অভিযান চালাচ্ছেন। ১ মার্চ থেকে অভয়াশ্রম এলাকায় মৎস্য বিভাগ ২০টি অভিযান চালিয়েছে। পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১০ ব্যক্তিকে ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানে ৬ লাখ ২৫ হাজার মিটার জাল ও ৫৩ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়েছে।