সুন্দরবনে আগুন: পোড়া বন দেখে মন খারাপ ছোট্ট জয়ন্তীর

বাবার সঙ্গে আগুনে পুড়ে যাওয়া বন ঘুরে দেখছে জয়ন্তী মণ্ডল। গতকাল সুন্দরবনের লতিফেরছিলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সুন্দরবনে বনে আগুন লাগার খবর প্রথম আসে গতকাল শনিবার সকালের দিকে। ঘটনাস্থলের পাশের গ্রাম আমোরবুনিয়া। গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভোলা নদী। এই নদী থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে বনের আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফেরছিলা এলাকাতে লাগে আগুন। নদীর ওই পাড়ের গ্রামের বাসিন্দারাই তা প্রথম বুঝতে পারেন ধোঁয়া দেখে। এরপর খবর ছড়ায় চারপাশে। সেই থেকে প্রশাসন, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সংবাদমাধ্যমসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করেন বনসংলগ্ন এই জনপদে।

শনিবার দুপুরের পর আমোরবুনিয়ার ক্যাম্পের দক্ষিণের লতিফেরছিলায় পৌঁছায় বন বিভাগ। অগ্নিকাণ্ডের এলাকা শনাক্তের পর আসেন ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। তবে সন্ধ্যা নামায় আগুন নিয়ন্ত্রণে সেভাবে বড় পরিসরে কাজ শুরু করা যায়নি সেদিন। পরদিন রোববার ভোর থেকেই ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগসহ সবার সমন্বয়ে শুরু হয় কাজ। সেখানে অসংখ্য সাধারণ মানুষকে দেখা যায় দা, কলসি, বালতি হাতে। তাঁরা কেউ গাছ কেটে পানির পাইপ নিতে রাস্তা করে দিয়েছেন। কেউ কলসি, বালতি দিয়ে পানি দিয়েছেন।

তীব্র তাপ আর পোড়া গন্ধে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর। বনে আগুন নেভাতে ব্যস্ত মানুষের ভিড়ে দেখা হয় ছোট্ট জয়ন্তী মণ্ডলের সঙ্গে। আগুনে পুড়তে শুরু করা বনের অন্তত আধা কিলোমিটার ভেতরে। জয়ন্তীর তখন মুখভার। চারপাশটা অবাক হয়ে দেখছে। তবে কোনো কথা নেই তার মুখে।

একটু পর কথা বলে জানা গেল, তার বাড়ি বনের পাশেই। ভোলা নদীর পাড়ে। স্থানীয় জিউধারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে জয়ন্তী। সকালে বাবার সঙ্গে বনে এসেছে সে।

জয়ন্তী বলল, ‘আগুন লাগছে শুনে আসলাম। পুড়ে গেছে! অনেক গাছ পুড়ে গেছে। খুব বেশি তাপ। দাঁড়ানো যায় না। শুধু পোড়া গন্ধ। বনে তো আগে অনেক আসছি। বাড়ি থেকেই সুন্দরবন দেখা যায়। তবে এই পোড়া বন ভালো লাগছে না। কষ্ট লাগছে সব পোড়া দেখে।’

আরও পড়ুন

তখন পাশে থাকা জয়ন্তীর বাবা দেবাশীষ মণ্ডল বলেন, সকাল থেকে মেয়েটা বায়না ধরছে, বনে আসবে। শুনেছে, পুড়ে গেছে বন। সবাই আসছে দেখতে। তাই জয়ন্তীও আসতে চাইছিল। ছোট মানুষ, মন খারাপ করবে– তাই নিয়ে এসেছেন।

জয়ন্তীর মতো পুড়ে যাওয়া বনের অবস্থা জানতে অনেকে এসেছিলেন সুন্দরবনের গহিনে। দেখা যায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কয়েকজন নারীকেও। তাঁদের একজন নাসিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আগুন কেডা দেখছে আগে? আমিই তো দেখলাম। কাইল (শনিবার) ১০-১১টার দিকে দেখি ধোঁয়া ওঠে। তখনই তো আমি সবাইরে খবর দিছি, আগুন লাগছে। এহন সবাই আইছে, তাই মনে হয় আগুনডা থামতেছে।’

আরও পড়ুন