বিজয়নগরের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর নিখোঁজের ঘটনাকে ‘সাজানো’ বলছে পুলিশ

প্রীতি খন্দকার
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রীতি খন্দকারের (হালিমা) নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে ধূম্রজাল ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রার্থী ও তাঁর পরিবারের লোকজন বলছেন নিখোঁজের কথা। কিন্তু স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ বলছে, এটি ‘সাজানো’ ঘটনা; ভোটারদের কাছে সমবেদনা পেতে এমনটি করেছেন ওই প্রার্থী।

নিখোঁজের ৪১ ঘণ্টা পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে পুলিশ প্রীতি খন্দকারকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয়। বিকেলে তাঁকে বিজয়নগর থানায় আনা হয়।

প্রীতি খন্দকার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। উপজেলা নির্বাচনে তাঁর প্রতীক পদ্মফুল। চতুর্থ ধাপে আগামী ৫ জুন বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। গত মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে আর বাড়িতে ফেরেননি প্রীতি। পরে তাঁর স্বামী মাসুদ খন্দকার বিজয়নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

আরও পড়ুন

জিডির অনুলিপি থেকে ও প্রার্থীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে ত্রুটির কারণে শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারায় নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষিত হন প্রীতি খন্দকার। পরে উচ্চ আদালত থেকে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান। এরপর থেকে তিনি দিনরাত প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে দুই নারী সহযোগীকে নিয়ে উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নে প্রচারণায় যান প্রীতি খন্দকার। হরষপুরের ঋষিপাড়ায় ঢুকে প্রচারণা চালানোর সময় দুই নারী সহযোগী বাইরে আসেন। তখন ভোটারদের সঙ্গে গ্রামের ভেতরে কথা বলছিলেন প্রীতি। ১০ থেকে ২০ মিনিট পার হলেও যখন প্রীতি বের হয়ে আসছিলেন না, তখন ওই দুই নারী ভেতরে যান। কিন্তু তাঁরা প্রীতিকে কোথাও খুঁজে পাননি।

উদ্ধার হওয়ার পর প্রীতি খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলার হরষপুরের ঋষিপাড়ায় প্রচারণা চালানোর সময় বোরকা পরা দুজন নারী আসেন। তাঁরা আমাকে বলেন, “সামনে একটি মাদ্রাসা আছে। মাদ্রাসা ছাত্রদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের ভালো যোগাযোগ আছে। সেখানে এখনো কোনো চেয়ারম্যান প্রার্থী যাননি। আপনি গেলে মাদ্রাসা ছাত্রদের মায়েদের ভোট পাবেন।” আর কিছু টাকা দিলে আমার প্রচারপত্র বোরকা পরিহিত দুই নারী বিতরণ করে দেবেন বলে জানান। আমি রাজি হয়ে তাঁদের সঙ্গে হাঁটা শুরু করি। এ সময় তাঁদের একজন আমাকে একটি পান খেতে দেন। পান খাওয়ার পর পর আমার মাথা ঘুরতে শুরু করে। পরে তাঁরা রাস্তায় থাকা কালো রঙের একটি হায়েস গাড়িতে উঠতে বলে। গাড়িতে ওঠার পর আমি আর কিছু বলতে পারি না। যখন জ্ঞান ফিরে তখন অন্ধকার, সন্ধ্যা নয়তো রাত হবে। তবে আজান শুনতেছিলাম। তখন তারা আমাকে একটি টিনের ঘরে নিয়ে রাখেন। সেখানে বোরকা পর দুই মহিলার সঙ্গে একজন পুরুষ লোক ছিল। তারা আমাকে গাড়িতে করেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছে।’

আরও পড়ুন

প্রীতি খন্দকারের অভিযোগ, তিনি যেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান সে জন্য ভয়ভীতি এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘অনেক অনুরোধ, অনুনয় ও কান্নাকাটির করে মিনতি করেছি। পরে মামলা না করার ও আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ার শর্তে তাঁরা আমাকে বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগের একটি মহাসড়কে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। সকালে ফাঁকা সড়কে কাউকেই পাচ্ছিলাম না। পরে রাস্তার মানুষের সহায়তায় কাঁচপুর হাইওয়ে থানায় গিয়ে একজন পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে মুঠোফোন নিয়ে আমার স্বামীকে কল দিই। পরে বিজয়নগর থানা-পুলিশ ও আমার স্বামী এসে আমাকে উদ্ধার করেন।’

যে সড়ক দিয়ে প্রীতি খন্দকার হরষপুর ঋষিপাড়ায় প্রচারণা চালান, সেটি খুব সরু। সেখানে কোনো মাইক্রোবাস প্রবেশের সুযোগ নেই বলে জানান স্থানীয় লোকজন। ঋষিপাড়ার তিনজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দিনদুপুরে এত মানুষের ভিড়ে একটি গাড়িতে তুলে তাঁকে নিয়ে যাবে আর সেটি কেউ দেখবে না তা হতেই পারে না। পুরো ঘটনাটি একটি নাটক। মানুষের সমবেদনা পেতে তিনি এমন করেছেন। বিষয়টি যে সাজানো তা কমবেশি সবাই বুঝতে পেরেছেন। নতুবা তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা চালাতে এসে প্রীতি খন্দকার একা অন্যদের সঙ্গে চলে গেছেন, আবার তাঁরা তাকে নিয়ে গেছেন-এটি শুনতেই তো সাজানো ঘটনা মনে হয়।’

বিজয়নগর থানার (ওসি) আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত করেছে। গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। আমাদের কাছেও পুরো বিষয়টি ফেইক এবং সাজানো বলে মনে হয়েছে। যেহেতু নির্বাচনের প্রচারণা চালাতে হবে, তাই কাঁচপুর হাইওয়ে থানা থেকে উদ্ধারের পর তাঁকে স্বামীর জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।’