লটারিতে একাধিকবার নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির ফল বাতিলের নির্দেশ

বগুড়া জেলার মানচিত্র

বগুড়া শহরের সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির লটারিতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ফল বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ স্বাক্ষরিত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ডিজিটাল লটারি-পরবর্তী ভর্তি কার্যক্রমসংক্রান্ত চিঠিতে মাউশি মহাপরিচালক আট দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা লটারিতে একাধিকবার নির্বাচিত হলেও যাচাই-বাছাইয়ে জালিয়াতি প্রমাণিত হলে তারা ভর্তির অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

মাউশির ওয়েবসাইটে দেওয়া পত্র সংগ্রহ করে দেখা গেছে, লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর, চলবে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি কার্যক্রম চলবে ২২ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আট দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

মাউশির মহাপরিচালকের ওই আট দফা নির্দেশনা হচ্ছে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা, কাগজপত্র যাচাইকালে শিক্ষার্থীর জন্মসনদের মূল কপি ছাড়াও অনলাইনে যাচাই, মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই, মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে কোনো শিক্ষার্থী লটারিতে নির্বাচিত হয়ে থাকলে তাকে ভর্তি না করা, একই শিক্ষার্থী অনলাইনে বারবার জন্মনিবন্ধন নম্বর পরিবর্তন করে মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে একাধিকবার লটারিতে নির্বাচিত হয়ে থাকলে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ায় তাকে ভর্তি না নেওয়া, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ জারিকৃত নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে ভালোভাবে কাগজপত্র যাচাই করা, মুক্তিযোদ্ধার কোটা ব্যতীত অন্য কোটা পূরণ না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শূন্য আসন পূরণ করা, সহোদর ও যমজ সন্তানদের ভর্তির ক্ষেত্রে ভর্তি কমিটি আবেদন যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ভর্তির ব্যবস্থা করা। এসব নির্দেশনা অনুসরণ না করে বিধিবহির্ভূতভাবে কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানকে দায়ভার গ্রহণ করতে হবে।

আরও পড়ুন
গত সোমবার বগুড়া জিলা স্কুল ও বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির লটারির ফলাফলে দুই বিদ্যালয়ে অন্তত ২০ শিক্ষার্থীর নাম একাধিক স্থানে আছে। এর মধ্যে সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে দুজন শিক্ষার্থীর নাম ছয় জায়গায় আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার বগুড়া জিলা স্কুল ও বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির লটারির ফলাফলে দুই বিদ্যালয়ে অন্তত ২০ শিক্ষার্থীর নাম একাধিক স্থানে আছে। এর মধ্যে সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে দুজন শিক্ষার্থীর নাম ছয় জায়গায় আছে। এ ছাড়া আরও সাত শিক্ষার্থীর নাম আছে দুই জায়গায়। অন্যদিকে লটারির ফলাফলে বগুড়া জিলা স্কুলেও এক শিক্ষার্থীর নাম আছে তিন জায়গায়। এ বিদ্যালয়ে মোট ১১ শিক্ষার্থীর নাম আছে একাধিক জায়গায়। এই শিক্ষার্থীরা আলাদা জন্মনিবন্ধন ও আলাদা ইউজার আইডি ব্যবহার করে একই বিদ্যালয়ে একাধিকবার আবেদন করেছে বলে প্রাথমিক যাচাইয়ে ধরা পড়ে। এ ছাড়া কেউ কেউ জন্মনিবন্ধন নম্বর ঘষামাজা করেছে। বিষয়টি জানার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে জানতে বগুড়া জিলা স্কুল ও বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মাউশিতে চিঠি পাঠানো হয়।

বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফী প্রথম আলোকে বলেন, তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য লটারির ফলে ১১ শিক্ষার্থীর নাম একাধিক স্থানে পাওয়া গেছে। তাঁদের নাম, মা ও বাবার নাম অভিন্ন থাকলেও জন্মনিবন্ধন নম্বর আলাদা। যাচাই-বাছাই করে জালিয়াতি প্রমাণিত হলে এই শিক্ষার্থীদের ফল বাতিল করা হবে।

বগুড়ার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন বলেন, লটারির ফলে ৯ শিক্ষার্থীর নাম দু-তিন জায়গায় আছে। শিক্ষার্থীর নাম, মা ও বাবার নাম এক হলেও জন্মনিবন্ধন আলাদা। একজন শিক্ষার্থীর জন্য একাধিক জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে আবেদন করা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ে জালিয়াতি প্রমাণিত হলে এই শিক্ষার্থীরা ভর্তির অযোগ্য বিবেচিত হবে।

আরও পড়ুন