কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি দুই তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের যুবককে অপহরণ করা হয়েছে। মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা এই অপহরণে জড়িত বলে স্বজনদের অভিযোগ। আজ শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত তাঁদের সন্ধান মেলেনি।
অপহৃত ব্যক্তিরা হলেন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমা পাড়ার ছুছিং ছা তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে ছৈলা মং (৪৪) ও নাতি ক্য মংথোএ তঞ্চঙ্গ্যা (৩৪)। পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৬ মে বেলা একটার দিকে দুজন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নাফ নদীর ৫ নম্বর স্লুইসগেট এলাকায় কাঁকড়া ধরতে যান। এ সময় আরসার কয়েকজন সদস্য দুই যুবককে অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে মিয়ানমারের দিকে নিয়ে যায়। আজ দুপুরে দুই যুবককে অপহরণের বিষয়টি টেকনাফ বিজিবি ও পুলিশের কাছে লিখিতভাবে জানানো হলে ঘটনা জানাজানি হয়।
আজ সন্ধ্যায় ছুছিং ছা তঞ্চঙ্গ্যা প্রথম আলোকে জানান, আরসার সদস্যরা তাঁর ছেলে ও নাতিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি জায়গায় আটকে রেখেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুজনের কেউ ফিরে আসেননি। আরসা কেন দুজনকে অপহরণ করল, তা তিনি জানেন না। দুজনের কেউ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। নিরাপদে দুজনের বাড়িতে ফিরে আসা নিয়ে মনে আশঙ্কা জাগছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে টানা তিন মাস ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘাত-লড়াই চলছে। আরাকান আর্মি দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) বেশ কিছু সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে। চৌকিগুলো পুনরুদ্ধারে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে আরসাও। এ নিয়ে রাখাইন রাজ্যে আরসার সঙ্গে আরাকান আর্মির মধ্যে বিরোধ ও মাঝেমধ্যে সংঘর্ষ বাধছে। বাংলাদেশি দুই তঞ্চঙ্গ্যাকে সম্ভবত আরাকান আর্মির সদস্য সন্দেহ করে ধরে নিয়ে যেতে পারে আরসা।
এর আগে উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের নাফ নদীতে মাছ শিকারে নেমে বাংলাদেশি ১২ জেলেকে অপহরণ করেছিল আরাকান আর্মি। পরে বাংলাদেশি নাগরিক শনাক্ত হওয়ার পর সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিজিবি ও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগপত্রে ছুছিং ছা তঞ্চঙ্গ্যা উল্লেখ করেন, নাফ নদীতে প্রতিদিনের মতো কাঁকড়া আহরণ করতে গিয়ে ১৬ মে দুপুরে আরসা কর্তৃক ছেলে ও নাতি অপহৃত হন। দুজনকে মিয়ানমারে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। দুজনকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে বিজিবি ও পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, দুজনকে অপহরণ করার লিখিত একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে আলোচনার চেষ্টা চলছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, তিনিও একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি সীমান্তসংক্রান্ত হওয়ায় পুলিশের করার কিছু থাকে না। তারপরও ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহিত করা হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান, এ ধরনের একটি খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে।