বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনীতে ছোটবেলার স্মৃতিচারণা
অনেক আগেই তাঁরা বিভিন্ন গন্তব্যে গেছেন। কেউ ব্যবসায়ী, কেউ ব্যাংকার, কেউ গৃহিণী, কেউ সরকারি চাকরিজীবী, আবার কেউ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপেই ছিল সীমাবদ্ধ। কারও তো আবার স্কুলজীবন শেষ হওয়ার পর আর যোগাযোগই হয়নি। আজ শুক্রবার আবার তাঁরা একসঙ্গে মিলিত হয়েছেন। উপলক্ষ বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী।
খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের বেদকাশী কলেজিয়েট বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৮ সালে। ১৯৭২ সাল থেকেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথমই প্রাক্তন পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো পুনর্মিলনী।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই অনুষ্ঠানে এসে যেন ফিরে গিয়েছিলেন সেই ছোটবেলার সোনালি দিনগুলোতে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের প্রাক্তনদের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছিল, ‘বন্ধু, কী খবর বল, কত দিন পর দেখা’, ‘এই মাঠেই তো খেলে বেড়াতাম, আজ চেনাই যায় না’, ‘পাশের এখানে ধানের বিল ছিল, ‘এখন তো সব লোনা পানির ঘের হয়ে গেছে’ প্রভৃতি। তাঁরা বলছিলেন মনের গহিনে জমে থাকা নানা কথা।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র পুনর্মিলন উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন আ ব ম আবদুল মালেক এবং সদস্যসচিব মনজুর এলাহী। প্রাক্তন ছাত্র পীযূষ কান্তি দত্ত, শেখ আনোয়ার হোসেন, মোস্তফা হুমায়ুন কবীর, এম তুহিন আলী, নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডলসহ আরও অনেকের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে স্মৃতিচারণা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক জি এম মাওলা বকস প্রমুখ।
এই বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন সরদার জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘পুনর্মিলনীতে এসে মনে পড়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ে পড়ার সেই ছোটবেলার স্মৃতিগুলো। আমরা যেদিন বিদায় নিয়েছিলাম, সেদিন সহপাঠীদের বলেছিলাম, আবার দেখা হবে। কিন্তু বাস্তবতার কারণে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি এরপর থেকে। পুনর্মিলনীতে এসে আবার তাদের সঙ্গে দেখা হলো। সত্যিই নস্টালজিক হয়ে পড়েছি আমরা।’
প্রাক্তন ছাত্র কয়রা উত্তর বেদকাশী ইউপির সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে যোগাযোগ না থাকায় পরিচিত মুখগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল। বহু বছর পর বিদ্যালয়ের পরিচিত মুখগুলো একসঙ্গে আজ। ছোটবেলার সেই রঙিন দিনগুলো বারবার মনে পড়ছে। এই মিলনমেলা যেন আমাদের সামনে এগিয়ে চলার শক্তি আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।’
আলোচনা সভা শেষে বিকেল গড়াতেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের হাতে স্মরণিকা, টি–শার্টসহ উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। ঘড়ির কাঁটা তখন বিকেল সাড়ে চারটা ছুঁই ছুঁই, সময় বলছে এবার বিদায়ের পালা। যাওয়ার বেলায় বিদায়ী বন্ধুরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, ‘আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো।’