মাইলেজ ভাতার দাবিতে ট্রেন আটকে রেলকর্মীদের বিক্ষোভ

মাইলেজ ভাতার দাবিতে ট্রেন আটকে রেলকর্মীদের বিক্ষোভ ও সমাবেশ। আজ দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনেছবি: প্রথম আলো

পাবনার ঈশ্বরদীতে মাইলেজ ভাতার দাবিতে দুটি ট্রেন আটকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ সোমবার সকালে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দাবি মানা না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা করেছেন তাঁরা।

দিনে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস হলেও রেলওয়ের কর্মচারীদের ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এ জন্যই তাঁদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়, যাকে রেলওয়ের ভাষায় ‘মাইলেজ’ বলে।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী আন্তনগর ‘কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস’ ও চিলাহাটিগামী ‘রূপসা এক্সপ্রেস’ ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে পৌঁছালে বেলা ১১টার দিকে ট্রেন দুটি আটকে বিক্ষোভ করেন রেলওয়ে কর্মচারীরা। প্রায় আধা ঘণ্টা পর তাঁরা রেললাইন থেকে সরে গেলে ট্রেন দুটি স্টেশন ছেড়ে যায়। এরপর স্টেশনটির ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সমাবেশ করেন তাঁরা।

সমাবেশে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ট্রেন পরিচালক (গার্ড), ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই), ট্রেনচালক (এলএম) ও সহকারী ট্রেনচালকেরা (এএলএম) অংশ নেন। এ সময় রেলওয়ে কর্মচারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আফজাল হোসেন, রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রবিউল ইসলাম, রেলশ্রমিক দল ঈশ্বরদী শাখার সভাপতি মাসুদ রানা প্রমুখ।

বক্তারা জানান, ‘মাইলেজ’ তাঁদের বেতনেরই অংশ। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক বেসিকের সমপরিমাণ টাকা বেশি পাবেন। এ ছাড়া অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি পাবেন। ব্রিটিশ আমল থেকে রেলওয়ে কর্মচারীদের জন্য এ নিয়ম চালু ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় রেলওয়ে কর্মচারীদের এ সুবিধা বাতিল করেছে। ফলে রেলওয়ে কর্মীরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেও তাঁদের ন্যায্য বেতন পাচ্ছেন না।

রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, ‘২০২২ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত রানিং স্টাফরা মাইলেজ ছাড়া প্রতিদিন মাত্র ৩০০ টাকা বেতন পান। এতে তাঁদের পরিবারের ভরণপোষণ তো দূরের কথা, নিজেদের খাবার খরচও জোটে না। তাই আমরা অবিলম্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’

সভাপতির বক্তব্যে রেলওয়ে কর্মচারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশে এ বৈষম্য মেনে নেওয়ার মতো নয়। যৌক্তিক দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছেন। দাবি না মানা হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেনের চাকা আর ঘুরবে না।

আন্দোলনরত কর্মীদের দাবির বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে বলে জানান পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, যৌক্তিক একটি সমাধান আসবে।’