সাড়ে ৮ কেজি ওজনের কাতলা শিকার করে পেলেন ৩ লাখ টাকার পুরস্কার
মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে জনপ্রতি ২৭ হাজার টাকা করে টিকিট কাটেন ৭৪ জন প্রতিযোগী। এতে আয়োজকেরা পেয়েছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। আর প্রতিযোগীদের জন্য ছিল প্রায় ৭ লাখ টাকার সাতটি পুরস্কার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের দত্তপাড়ার (কলেজপাড়া) বিরেশ দিঘিতে শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত হয় এ প্রতিযোগিতা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের মেড্ডা এলাকার সাবেক পৌর কমিশনার জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হোসেন (৫৫) একজন শৌখিন মৎস্যশিকারি। তিনি সকাল সাড়ে আটটার দিকে ৮ কেজি ৭৫০ গ্রাম ওজনের একটি কাতলা শিকার করেন। এর আগে ও পরে তিনি আরও দুটি বড় মাছ শিকার করেও ধরে রাখতে পারেননি। তবে এক কাতলা শিকার করেই জিতে নিয়েছেন ৩ লাখ টাকার প্রথম পুরস্কার।
সরেজমিনে জানা যায়, বিরেশ দিঘিতে দিনব্যাপী বড়শি দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগীদের জন্য আসন ছিল ৩৭টি। এসব আসনে ৭৪ জন শৌখিন মৎস্যশিকারি অংশ নেন। তাঁদের আসন লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। একজন শিকারিকে মাছ ধরতে টিকিট ছাড়া আনুষঙ্গিক আরও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। আসনের মালিকদের অনেকে ভাড়া করে শিকারি নিয়ে এসেছিলেন। ভাড়াটে শিকারিকে দিতে হয়েছে তিন হাজার টাকা করে। এ ছাড়া পুরস্কারের ১০ শতাংশ দিতে হয় ভাড়াটে শিকারিকে।
শৌখিন মৎস্যশিকারিরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা থেকে এসেছেন। প্রতিযোগীদের জন্য ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সাতটি পুরস্কার। এর মধ্যে জামাল হোসেন ৮ কেজি ৭৫০ গ্রাম ওজনের কাতলা শিকার করে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন তিন লাখ টাকা।
প্রথম পুরস্কার পাওয়া জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি কাতল শিকার করেই প্রথম পুরস্কার পেয়েছি। তবে আজকের আসরে আরও বড় দুটি মাছ সুতা ছিঁড়ে চলে গেছে। নইলে আজ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার আমিই পেতে পারতাম। এর আগে এখানে দুটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। অনেকগুলো মাছ শিকার করতে পারলেও কোনো পুরস্কার পাইনি। আজ এক কাতলেই বাজিমাত করতে পেরেছি। ভালোই লাগছে।’
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা গ্রামের আজগর ভাণ্ডারী ৫ কেজি ৬১৫ গ্রাম ওজনের কাতলা শিকার করে দ্বিতীয় হয়ে দেড় লাখ টাকার পুরস্কার পেয়েছেন। কলেজপাড়ার আবু শামীম মোহাম্মদ জাবেদ ৩ কেজি ৭১০ গ্রাম ওজনের কাতলা শিকার করে ৭৫ হাজার টাকার তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।
পৌনে তিন একর দিঘিটির মালিক সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের দত্তপাড়া (কলেজপাড়া) গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর পরিবার। ওই পরিবারের কাছ থেকে সরাইল মৎস্য চাষ প্রকল্প নামের একটি সমিতি ৯০ লাখ টাকায় বন্ধক নিয়েছে। তারা প্রতিবছর কয়েকবার মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এ বছর এখানে এর আগে আরও দুটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতা দেখতে দিঘির চারদিকে দর্শকের সমাগম ঘটে। সরাইল মৎস্য চাষ প্রকল্পের সভাপতি আলী মিয়া জানান, এখানে প্রতিবছর এ ধরনের আয়োজন করা হয়। এটি এ বছরের তৃতীয় আয়োজন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শৌখিন মৎস্যশিকারিরা এখানে অংশগ্রহণ করে থাকেন।