বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছাত্রীর লাশ উদ্ধার, ধারণা আত্মহত্যা

শেফা নূর ইবাদি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়তেনছবি: শেফার ফেসবুক থেকে নেওয়া

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পাঠকক্ষ থেকে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাত ১১টার দিকে শেফা নূর ইবাদি নামের ওই ছাত্রীকে পাঠকক্ষের জানালার গ্রিলের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

শেফা নূর ইবাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়তেন। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায়।

বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে হলের পাঠকক্ষে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ওই ছাত্রীকে পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বঙ্গমাতা হলের ১৪১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের সঙ্গে ওই ছাত্রীর প্রেম ছিল। দুজনের মনোমালিন্য হওয়ায় ওই ছাত্রকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ফাঁস নেন তিনি।

শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নেন শেফা নূর ইবাদি। এদিন বেলা সোয়া ১১টা থেকে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচিতে প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা যায় শেফাকে। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ও তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননের ঘটনা বেড়েছে। গত এক বছরে প্রায় এক ডজন আত্মহত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ হেনা রাণী বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটি খুবই আবেগপ্রবণ ছিলেন। প্রেমিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবদুল কাইউম বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং অ্যান্ড গাইডেন্স সেন্টার খোলা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সেলিং করা হয়। তারপরও এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি বলেন, ‘আমরা আরও বেশি উদ্যোগ নেব, যাতে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে।’

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননের ঘটনা বেড়েছে। গত এক বছরে প্রায় এক ডজন আত্মহত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে দুজন ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহনন করেন। এ নিয়ে অভিভাবক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্বেগ বাড়ছে।

সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত একটি মেসে নিজ কক্ষে গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে ‘আত্মহত্যা করেন’ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বৃষ্টি সরকার। গত বছরের জুলাইয়ে একই কায়দায় মেসের কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা করেন’ উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিন রিভানা। গত বছরের ১৭ মার্চ বরগুনায় স্বামীর কর্মস্থলে ‘আত্মহত্যা করেন’ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী দেবশ্রী রায়।

গত এক বছরে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলে দুজন ছাত্র, শেরেবাংলা হলে তিনজন ছাত্র, শেখ হাসিনা হলে একজন ছাত্রী, রূপাতলী হাউজিং এলাকায় নিজ নিজ মেসে দুজন ছাত্র ও এক ছাত্রী, শেখ হাসিনা হলের সামনে এক ছাত্র এবং ঝালকাঠিতে নিজ বাসভবনে একজন ছাত্র আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন