বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ: জাহাঙ্গীর–সাদিককে মঞ্চে দেখতে চান না জাহিদপন্থীরা

জাহিদ ফারুক (বাঁয়ে) ও সাদিক আবদুল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত

বরিশালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী জনসভা ২৯ ডিসেম্বর। সেই জনসভার মঞ্চে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদককে দেখতে চান না প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। বরিশাল আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি সভায় এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন খায়ের আবদুল্লাহ। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব আরও চাঙা হয়ে উঠেছে।

জাহিদ ফারুক ও খায়ের আবদুল্লাহর অনুসারী নেতারা বলছেন, সাদিক আবদুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকেও দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। একই সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর সম্প্রতি গত সিটি নির্বাচন নিয়ে ‘বিরূপ’ মন্তব্য করে নির্বাচনব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এ জন্য তাঁরা দুজনই প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশ মঞ্চে ওঠার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

তবে সাদিকের অনুসারী নেতারা বলেছেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে দলীয় বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ায় সাধারণ ভোটার ও নেতা-কর্মীদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সাদিক আবদুল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের জন্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুক কোমড় বেঁধে নেমেছেন। আসলে সাদিকের জসসমর্থনকে ভয় পেয়েই এমনটা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

জাহিদ ফারুকের অনুসারী বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আফজালুল করিম আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যৌক্তিক বলেই আমরা প্রধানমন্ত্রী জনসভা মঞ্চে এই দুজনের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তুলেছি। আমরা এই ব্যাপারে অনঢ়।’

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। তবে তাঁর বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বসহ কয়েকটি অভিযোগ তোলেন জাহিদ ফারুক। এরপর সাদিকের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন সাদিক আবদুল্লাহ। হাইকোর্ট সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে তাঁকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে আদেশ দেন। হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন জাহিদ ফারুক। এরপর হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এরপর সাদিক আবদুল্লাহ প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে গত বুধবার আবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। আগামী ২ জানুয়ারি যার শুনানি হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালের এক নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেবেন। ওই দিন বেলা তিনটায় নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বক্তব্য দেবেন। যৌথভাবে এই জনসভা আয়োজন করছে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর বরিশালে আগমন ও জনসভা সফল করতে বুধবার দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের প্রস্তুতি সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সিটি মেয়ের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, মহানগর সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীরসহ দলের নেতারা।

সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর প্রকাশ্য জনসভায় নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার বিষয়টি নিয়ে এই দুই নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই কর্মকাণ্ডের পর শেখ হাসিনার জনসভা মঞ্চে তাঁদের উপস্থিত হওয়ার সুযোগ নেই বলেন মন্তব্য করেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর এক ‘শান্তি’ সমাবেশে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, ‘সিটি নির্বাচনে আমাদের গাধা বানিয়েছে। আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। কিন্তু আমরা কোনো বহিরাগতকে আর সুযোগ দেব না। ওই নির্বাচনের মতো খালি মাঠে গোল দিতে দেব না।’ তিনি বলেন, ‘এবার খেলা হবে। প্রশাসন ব্যবহার করে বাক্স ভরবেন, সেই সুযোগ নেই।’

জানতে চাইলে এ কে এম জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এখনো এই পদেই আছি। আর জনসভা আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় থাকবে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে  কে কি দাবি তুলল না–তুলল, তাতে কিছু যায় আসে না।’

জাহিদ ফারুকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের একটি শীর্ষ পদে থেকে জাহাঙ্গীর যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অন্তর্ঘাতমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা দলের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান। তিনি গুরুতর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এতে  তাঁর দলীয় পদই থাকা উচিত নয়। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চে উপস্থিত থাকার বিষয় তো দূরে থাক।’