আত্রাই পারাপারে ভরসা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো

ঝুঁকি এড়াতে অনেকে অতিরিক্ত তিন থেকে চার কিলোমিটার পথ ঘুরে মান্দা উপজেলা সদর, নওগাঁ ও রাজশাহী শহরে যাতায়াত করেন।

আত্রাই নদের ওপর সেতু নির্মিত না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লোকজন। সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিকাপুর খেয়াঘাটেছবি: প্রথম আলো

এলাকায় আরও বেশি উন্নয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কৃষকদের সুদিন আসতে পারত। কিন্তু আত্রাই নদের ওপর সেতু না থাকায় সে সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। হতাশার সুরে কথাগুলো বলছিলেন, নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিকাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান।

মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে উপজেলার কালিকাপুর ঘাটে সেতু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পান তাঁরা। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর পূরণ করা হয়।

উপজেলার কালিকাপুর বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদ। ওই স্থান এলাকাবাসীর কাছে কালিকাপুর খেয়াঘাট হিসেবে পরিচিত। সেখানে আত্রাই নদের প্রায় ৮০ ফুট দীর্ঘ নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। ২১ জানুয়ারি গিয়ে দেখা যায়, হেঁটে, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ সাঁকো পার হচ্ছেন।

একটি সেতুর অভাবে এভাবেই যুগ যুগ ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নদের দুই পারের বিভিন্ন গ্রামের লক্ষাধিক বাসিন্দা। বর্ষায় নৌকা আর শুকনা মৌসুমে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোই নদটি পারাপারের একমাত্র ভরসা স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মান্দার উত্তর পারইল, সূর্য নারায়ণপুর, সাতবাড়িয়া, কাঞ্চন, বিনোদপুর, গণেশপুর, নীলকুঠি, পার কালিকাপুর, আয়াপুর, মেরুল্যা, কালিগ্রাম, রামনগরসহ গণেশপুর ও কালিকাপুর ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ কালিকাপুর খেয়াঘাট দিয়ে চলাচল করে। কালিকাপুর খেয়াঘাটের দক্ষিণে কালিকাপুর বাজার ও দক্ষিণে কাঞ্চন বাজার এবং সতীহাট বাজার। এসব বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসে। এ ছাড়া কালিকাপুর বাজারে প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কাঞ্চন বাজারেও উচ্চমাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। স্কুলগুলোতে নদের দুই পারের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। নদের উভয় পারের মানুষ সড়কপথে মান্দা উপজেলা সদর, নওগাঁ জেলা শহর ও রাজশাহী শহরে যেতে কালিকাপুর খেয়াঘাট ব্যবহার করে। কিন্তু সেতুর অভাবে বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় জনসাধারণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

গণেশপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ইয়াসিন আলী বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫১ বছরে কালিকাপুর খেয়াঘাটে একটি সেতু না হওয়া বেদনাদায়ক। প্রতিবার জাতীয় কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এলেই প্রার্থীদের কাছ থেকে এখানে একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতির কথা শুনি। কিন্তু নির্বাচনে জয়ের পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আর সেই কথা মনে রাখেন না।’

স্থানীয় লোকজন বলেন, কালিকাপুর খেয়াঘাটে প্রায় ২৫০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মিত হলেই নদ পারাপারে আর ভোগান্তি থাকবে না। ঝুঁকি এড়াতে অনেকে অতিরিক্ত তিন থেকে চার কিলোমিটার পথ ঘুরে মান্দা উপজেলা সদর, নওগাঁ ও রাজশাহী শহরে যাতায়াত করেন।

উত্তর পারইল গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান আলী বলেন, এখানে সেতু না থাকায় কৃষকদের খেতের ধান কিংবা অন্য ফসল ঘরে তুলতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবার হাটবাজারে বিক্রির জন্য কৃষিপণ্য নিতে গেলেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। নৌকায় মালামাল আনা-নেওয়া করতে খরচ অনেক পড়ে যায়।

উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান মিঞা বলেন, কালিকাপুর খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া

আছে। কালিকাপুর ছাড়াও মান্দার প্রসাদপুর ও জোকাহা খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। জনগুরুত্ব বিবেচনা করে আশা করছি, এসব এলাকায় আগামী অর্থবছর নাগাদ প্রকল্পগুলো পাস হবে।