বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগে গুলি, সেই বাঁহাতি শুটার কে

বিএনপি নেতার জনসংযোগের সময় ভিড়ের মধ্যে সরোয়ারের ঘাড়ে পিস্তল তাক করছেন কেউ একজন। গুলিতে ঘটনাস্থলেই সরোয়ারের মৃত্যু হয়ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

চট্টগ্রাম–৮ আসনে (বোয়ালখালী–চান্দগাঁও) বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর জনসংযোগে গুলি চালানো ব্যক্তি এক মাসেও শনাক্ত হয়নি। নেতা–কর্মীদের ভিড়ের মধ্যে খুব কাছ থেকে গুলি করে একজনকে খুন ও বিএনপি প্রার্থীকে আহত করার এ ঘটনায় প্রশিক্ষিত কোনো শুটার জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবে বাঁহাতি সেই শুটার কে, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগে গুলির করার এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে থাকা ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন ওই আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহসহ আরও পাঁচজন।

গুলি করার সেই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, জনসংযোগে মানুষের ভিড়ের মধ্যে বাঁহাতি এক শুটার একের পর এক গুলি করছেন। তাঁর চেহারা দেখা না গেলেও ভিডিওতে হাত দেখা যাচ্ছে। একজনের ঘাড়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করছেন ওই শুটার।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিএনপি প্রার্থী বায়েজিদ বোস্তামী থানার খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগ করার সময় তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা–কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। হঠাৎ কয়েকটি গুলির শব্দ শুনে নেতা–কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় গুলিতে নিহত হন সরোয়ার। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা–চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫টি মামলা ছিল। ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হওয়া পাঁচজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান এলাকাবাসী।

পুলিশ জানায়, যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে আশপাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। অস্ত্রধারী ব্যক্তি হত্যার জন্য পরিকল্পিতভাবে সে স্থানটি বেছে নেন। চেহারা দেখা না গেলেও বাঁহাতি ওই শুটারের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হবে বলে ধারণা পুলিশের।

পুলিশ জানায়, যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে আশপাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। অস্ত্রধারী ব্যক্তি হত্যার জন্য পরিকল্পিতভাবে সে স্থানটি বেছে নেন। চেহারা দেখা না গেলেও বাঁহাতি ওই শুটারের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হবে বলে ধারণা পুলিশের।

সরোয়ার নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা করেন তাঁর বাবা আবদুল কাদের। মামলায় বিদেশে পলাতক ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ আলীসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ২২ জনকে আসামি করা হয়। শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করছেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক কাউসার হামিদ। এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯ আসামিকে। তাঁরা হলেন মো. মুন্না, আলাউদ্দিন, মো. হেলাল, মো. বাবুল, মো. সোহেল, মো. আজিজ, বাবুল তালুকদার, মো. রোকন ও মোক্তার বেগম। তাঁদের কেউ ঘটনা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেননি।

মামলার এজাহারে থাকা আসামি সন্ত্রাসী মো. রায়হান, মোবারক হোসেন ওরফে ইমন, মো. বোরহান ও নিজামকে ধরতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ জানায়, রায়হানের নামে গত বছরের ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি হত্যা মামলা। মোবারক ও বোরহানের বিরুদ্ধে সাতটি করে মামলা রয়েছে। তাঁরা বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

গুলিতে নিহত সরোয়ার হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

নিহত সরোয়ারের পরিবার ও পুলিশ বলছে, সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সঙ্গে পূর্ববিরোধ ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সরোয়ারকে গুলি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়েছে নির্বাচনী জনসংযোগ। এর আগে গত ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় তাঁর একটি প্রাইভেট কারকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সরোয়ার। তবে গুলিতে নিহত হন দুজন।

নির্বাচনী জনসংযোগে সরোয়ারকে গুলি করে মারার ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক কোনো বিরোধের ঘটনা রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। জানতে চাইলে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অস্ত্রধারী সেই শুটারকে চিহ্নিতের কাজ চলছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

জনসংযোগে গুলির ঘটনার পর ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। র‍্যাবও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। জানতে চাইলে র‌্যাব–৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অস্ত্রধারী সেই শুটারকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছে র‍্যাব। তদন্তের স্বার্থে নাম বলা যাচ্ছে না।’

সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে ওঠে। ঘটনায় জড়িত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।
এরশাদ উল্লাহ, বিএনপির প্রার্থী, চট্টগ্রাম–৮

চিকিৎসা নেওয়ার পর বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে ওঠে। ঘটনায় জড়িত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।’

ছেলের হত্যাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশ মামলার বাদী ও নিহত সরোয়ারের বাবা আবদুল কাদের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজের চোখের সামনে লোকজনের ভিড়ে যেভাবে ছেলেকে গুলি করে মেরেছে, তা কিছুতেই ভুলতে পারছি না। ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দূরে থাক, তাদের এখনো ধরতেই পারেনি পুলিশ।’

নিহত সরোয়ারের ভাই মো. আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনায় জড়িত অস্ত্রধারীদের পুলিশ ধরতে পারছে না। উল্টো সন্ত্রাসীরা আমাদের হুমকি দিয়ে আসছে। আমাদের পরিবার খুবই নিরাপত্তাহীনতায়।’