‘দুই বছর ধরে ঘুরছি, তবু এনআইডি ঠিক হলো না’

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশোধনের আবেদনগুলোকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। বর্তমানে এসব বিভাগে চট্টগ্রামে ৩১ হাজারের বেশি আবেদন রয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্রে মা–বাবার নাম সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন মো. সাইফুল ইসলামছবি : প্রথম আলো

দুই বছর ধরে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) মা–বাবার নাম সংশোধনের জন্য চট্টগ্রামের নির্বাচন কার্যালয়ে ঘুরছেন মো. সাইফুল ইসলাম। কিন্তু এত দিনের চেষ্টার পরও মেলেনি সমাধান।

নগরের উত্তর কাট্টলীতে বসবাসকারী সাইফুল পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। জীবিকার তাগিদে যখন যা পান, তা-ই করেন। কয়েক বছর ধরে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সে লক্ষ্যে পাসপোর্ট করতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর এনআইডিতে বাবা ও মায়ের নাম ভুল। এরপর পাসপোর্ট কার্যালয়ের পরামর্শে এনআইডি সংশোধনের জন্য প্রায় দুই বছর আগে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আবেদন করেন তিনি।

গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয় প্রাঙ্গণে কথা হয় সাইফুলের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। প্রথম আলোকে সাইফুল বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় বাবার ডাকনাম কবির আহম্মদ আর মায়ের নাম বুলুয়ারা বেগম দিয়েছিলাম। কিন্তু বাবার আসল নাম এস এম তৈয়বুর রহমান ও মায়ের নাম বুলু আক্তার। এ কারণে সংশোধনের আবেদন করেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’

সাইফুল জানান, জাতীয়তা সনদ, প্রত্যয়নপত্র, মা-বাবার এনআইডির অনুলিপি, ভাইয়ের এনআইডি, এমনকি মা-বাবার নিকাহনামাও জমা দিয়েছেন। তবু ফল মেলেনি।

সাইফুল জানান, জাতীয়তা সনদ, প্রত্যয়নপত্র, মা–বাবার এনআইডির অনুলিপি, ভাইয়ের এনআইডি, এমনকি মা–বাবার নিকাহনামাও জমা দিয়েছেন। তবু ফল মেলেনি। তিনি বলেন, ‘দুই বছর ধরে ঘুরছি। কত কাগজ দিলাম, কত লোক ধরলাম। এখন পর্যন্ত কিছু হলো না। ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে।’

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য চট্টগ্রাম নির্বাচন কার্যালয়ে অনেকেই ভিড় করেন প্রতিদিন
ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশোধনের আবেদনগুলোকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। ছোটখাটো সংশোধনগুলো ‘ক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ক্ষেত্রে সংশোধনকারী ব্যক্তি হচ্ছেন সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এরপর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সংশোধন করতে পারবেন ক বিভাগভুক্ত ভুলগুলো। নামের ছোটখাটো ভুল এই বিভাগে পড়বে।

তদন্তে অনেকগুলো বিষয় দেখা হয়। আবেদনকারী মা-বাবার আসল সন্তান কি না, মা-বাবার কয়টি বিয়ে, ভাইবোনের এনআইডি ও অন্যান্য নথি, পারিবারিক সনদ ইত্যাদির মাধ্যমে যদি প্রমাণ করতে পারেন তখনই মা-বাবার নাম সংশোধন হবে। এটা অবশ্যই সময়সাপেক্ষ।
— মো. বেলায়েত হোসেন, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম

‘খ’ বিভাগের ভুলগুলো সংশোধন করবেন অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। ‘গ’ বিভাগভুক্ত ভুল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সংশোধন করবেন। এরপর ‘ঘ’ বিভাগভুক্ত ভুল বিশেষ করে যাদের বয়স ১০ বছরের বেশি পরিবর্তন করতে হবে সেগুলো নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত।

আরও পড়ুন

বর্তমানে এসব বিভাগে চট্টগ্রামে ৩১ হাজারের বেশি আবেদন রয়েছে। সাইফুলের সংশোধনীটা গ বিভাগে পড়েছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যদি তাঁর আবদেন এবং জমা দেওয়া নথি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে মনে হয় সঠিক সে ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়। তারপরও এটা থানা পর্যায়ে তদন্ত করে প্রমাণসাপেক্ষে সংশোধন হতে পারে। কারণ, অনেকে ভুয়া আবেদন করেন। তদন্তে অনেকগুলো বিষয় দেখা হয়। আবেদনকারী মা-বাবার আসল সন্তান কি না, মা-বাবার কয়টি বিয়ে, ভাইবোনের এনআইডি ও অন্যান্য নথি, পারিবারিক সনদ ইত্যাদির মাধ্যমে যদি প্রমাণ করতে পারেন তখনই মা-বাবার নাম সংশোধন হবে। এটা অবশ্যই সময়সাপেক্ষ।

তবে এসব সংশোধনীতে ঘুষের লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমেদ বলেন, ‘ঘুষের অভিযোগ সত্য নয়। আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। কেউ যদি টাকা দাবি করে, তাহলে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন