ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে বাস চলাচল করছে না, নতুন করে আন্তজেলা বাসও বন্ধ
ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে বাস চলাচল শুরু হয়নি। নতুন করে আন্তজেলা বাস চলাচলও বন্ধ আছে। এতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন যাত্রীরা। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে অনেকে কর্মস্থলে যেতে পারেননি। গন্তব্যের উদ্দেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অনেকে ময়মনসিংহ শহরে এলেও বাস বন্ধ থাকায় ঢাকায় যেতে না পেরে বাড়ি ফিরে যান।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) হালুয়াঘাট উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আবু রায়হানকে ইউনাইটেড পরিবহনের শ্রমিক লাঞ্ছিত করেছেন—এমন অভিযোগে এনসিপির নেতা-কর্মীরা ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা চার দফা দাবি জানান।
ইউনাইটেড বাস কাউন্টারের সামনে এনসিপি নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি এবং এক শ্রমিককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা থেকে পরিবহনশ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ময়মনসিংহ-ঢাকা সড়কের দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকায় তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে, দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসন শ্রমিকনেতা ও এনসিপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলোচনায় বসে। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমের মালিকানাধীন ইউনাইটেড পরিবহনের ১৬টি গাড়ি বন্ধ করে দেওয়ার আশ্বাস দিলে এনসিপি নেতারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। গাড়ি চলাচলে কেউ বাধা দেবেন না—এমন আশ্বাসে শ্রমিকেরাও গতকাল বিকেলে সড়ক থেকে সরে যান। কিন্তু বিকেল পাঁচটা থেকে ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের ৭০টি ও শৌখিন এক্সপ্রেসের ১৫০টি বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আজ রোববার সকাল থেকে ঢাকাগামী সব ধরনের বাস এবং ময়মনসিংহ থেকে আন্তজেলার সব বাস বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহনশ্রমিক ও নেতারা।
মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, আজ সকাল ছয়টা থেকে কোনো বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। গন্তব্যে যেতে না পেরে অনেকে ফিরে গেছেন, অনেকে আবার বিকল্প উপায়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মাসকান্দা বাস টার্মিনালে ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের কাউন্টারের সামনে ব্যানার টানিয়ে শ্রমিকদের অবস্থান করতে দেখা যায়। ইউনাইটেড গাড়ির শ্রমিক হাফিজুর রহমান বলেন, সড়কে কোন গাড়ি চলবে, কোন গাড়ি চলবে না, তা নির্ধারণ করে মালিক সমিতি। কিন্তু তা নির্ধারণ করার কাজ তো এনসিপির নয়।
জেলা এনসিপির সদস্য মোজাম্মেল হক বলেন, যাঁরা ফ্যাসিস্ট ও শহীদ সাগরের ‘হত্যাকারী’ শামীমের ১৬টি বাস বন্ধের বিপক্ষে গিয়ে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন, তাঁদের সিন্ডিকেট চিরতরে ভেঙে দেওয়া হবে।
এদিকে ময়মনসিংহের মাসাকান্দা, দীঘারকান্দা বাইপাস ও পাটগুদাম ব্রিজ মোড় ঘুরে দেখা গেছে, কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। যাত্রীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা ও ইজিবাইকে চলাচল করছেন। অনেকে পিকআপ ভ্যানে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
নিরাপত্তার কথা ভেবে ঢাকাগামী বাস ও আন্তজেলা বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল, তা ঢাকার মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে দেওয়া হয়নি। এনসিপি যে দাবি করেছে, তা কিছু ব্যক্তির স্বার্থে করা হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট বাস কাউন্টারে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়। কয়েক দিন পরপর কাউন্টারে গিয়ে ঝামেলা করবে, এসব কার ইন্ধনে করা হচ্ছে, তা বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। গ্রেপ্তার অরুণ চন্দ্র দাস এনসিপির কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ না করলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। শ্রমিকদের দাবি, অরুণকে মুক্তি দিতে হবে। এসব দাবি না মানা পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
ময়মনসিংহ জেলা ট্রাফিকের পরিদর্শক (প্রশাসন) আবু নাসের মো. জহির বলেন, ঢাকা থেকে বাস চলাচল বন্ধের নির্দেশনার কথা বলছেন শ্রমিকেরা। কিন্তু কী জন্য তাঁরা বাস বন্ধ রেখেছেন, সেটি স্পষ্ট করছেন না। আজ লোকাল বাস চলাচলও বন্ধ আছে।