বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশুটি মৃত্যুর অভিযোগ, এক দিনের ছুটি ঘোষণা

বিদ্যালয়ের গেটের সামনেই বালুভর্তি ট্রাকের চাপায় শিশুশিক্ষার্থী রনির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এক দিনের ছুটি ঘোষণা করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ী ইউরিকো এঞ্জেল স্কুল গেটের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের কোনাবাড়ী ইউরিকো এঞ্জেল স্কুলের পশ্চিম পাশে শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে একটি বাস্কেটবল খেলার মাঠ। মাঠটি ভরাট করার জন্য ট্রাক দিয়ে ফেলা হচ্ছে বালু। বালু ফেলে ট্রাকটি ফিরে যাওয়ার সময় স্কুল গেটের সামনেই ট্রাকের চাপায় ৮ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থী মো. রনির মৃত্যু হয়।

গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। এ মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকেরা স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন।

এদিকে এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করে আজ বৃহস্পতিবার এক দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে ইউরিকো এঞ্জেল স্কুল কর্তৃপক্ষ। নিহত শিশু রনির চাচা মানিক ফারাজি বলেন, ‘স্কুলে কর্তৃপক্ষ যদি স্কুল টাইমে ট্রাক দিয়া বালু ফেলতে না যাইত, তাহলে তো আমার ভাতিজার মৃত্যুটা এই ভাবে হইতো না। স্কুলে লোকদের খামখেয়ালির লাইগাই ভাতিজারে হারাইলাম।’

মারা যাওয়া রনি ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার চৈতন খালী গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে। সে কোনাবাড়ী ইউরিকো এঞ্জেল স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। ফরিদ মিয়া স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোনাবাড়ীর হরিণাচালা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।

রনির মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার পুলা (ছেলে) নিয়া বড় চিন্তায় থাকতাম। পুলাডারে স্কুলে ভর্তি করছিলাম। হেই স্কুলেই ট্রাকের নিচে পইড়া আমার পুলাডা মইরা গেল। অহন আমাগো কী হয়বো। কারে নিয়া থাকুম।’

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ফরিদ মিয়া ও মনোয়ারা বেগম দম্পতির সংসারে এক মেয়ে ও ছেলে ছিল। প্রথম সন্তান জন্মের চার মাসের মাথায় অসুস্থ হয়ে মারা যায়। পরে তাঁদের সংসারে রনির জন্ম হয়। মনোয়ারা বেগম ছেলেকে নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকতেন। রনিকে নিরাপদে রাখার জন্য স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করান। পরে সেখান থেকে নিয়ে কোনাবাড়ী ইউরিকো এঞ্জেল স্কুলে জানুয়ারি শুরুতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করান। সেই স্কুলেই গেটের সামনেই ট্রাকের চাপায় রনির মৃত্যু হলো।

কোনাবাড়ী ইউরিকো এঞ্জেল স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে জাপানের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এঞ্জেল অ্যাসোসিয়েশনের আওতায়। আ্যসোসিয়েশনটির জ্যেষ্ঠ কার্যক্রম কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি একটি দুর্ঘটনা। ঘটনা ঘটে গেছে, এখন আর কী করা বলেন।’

বিদ্যালয়টি শিক্ষক মো. আরিফুজ্জামান মানিক বলেন, স্কুল ছুটি হয় বেলা ১১টায়। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বুধবার রনিকে নিতে কেউ আসেনি। পরে সে স্কুলের মাঠে দোলনায় বসে খেলাধুলা করে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে স্কুলের গেট থেকে বের হয়। বের হয়েই স্কুল গেটের সামনে গেলে স্কুলের ভেতর থেকে একটি ট্রাক বালু ফেলে ফিরে যাওয়ার সময় রনিকে চাপা দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রনিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছি, বাঁচানোর সব ধরনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। রনির মৃত্যুতে আমরা শোকাহত এবং বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ইউরিকো এঞ্জেল স্কুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্কুল গেটের সামনেই পানি দিয়ে ভেজা একটি স্থান। পাশের কয়েকজন এগিয়ে এসে জানান, এখানেই রনিকে ট্রাকটি চাপা দেয়। অনেক রক্ত পড়ে ছিল, তাই ধুয়ে ফেলা হয়েছে। স্কুলে গেটের সামনে বড় ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। তাতে লেখা, ‘ইউরিকো এঞ্জেল স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র মো. রনি মিয়া ১ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় অকালমৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’

স্কুল গেটের সামনে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আসমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো সড়ক নয়। এটা জনবহুল আবাসিক এলাকার একটি রাস্তা। সেই রাস্তায় স্কুলের গেটের সামনে ছাত্রের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক।’

আরও পড়ুন