আমন্ত্রণপত্রে নেতাদের নাম নেই, বিদ্যালয়ের ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ

শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ছবি: প্রথম আলো

আমন্ত্রণপত্রে স্থানীয় নেতাদের নাম বাদ পড়ায় গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বনির্ধারিত বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। আজ রোববার বিদ্যালয়ে ওই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন জানান, গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্যালয়ে এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। এ সময় বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে মারধরও করা হয়। বাধ্য হয়ে তিনি পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান স্থগিত করেছেন। এ ঘটনায় আজ তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম সরকারসহ কয়েকজন বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ২০ মিনিটে বিদ্যালয়ে আসেন। তখন ক্রীড়া অনুষ্ঠানের পুরস্কার কিনতে তিনি ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি টঙ্গীতে ছিলেন। শিক্ষকদের কাছে নিমন্ত্রণপত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম না থাকা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে আরিফুল ইসলাম আয়োজন বন্ধ রাখতে বলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে সিঁড়ির নিচে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। আরিফুল বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি বলে তিনি জানান।

শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন সাবেক কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অতীতের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্রে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নাম ছিল। কিন্তু এবার নিমন্ত্রণপত্রে তাঁদের নাম দেওয়া হয়নি। এ জন্য তিনি আপত্তি জানিয়েছেন। এরপর প্রধান শিক্ষক আপাতত অনুষ্ঠান বন্ধ রেখে ঈদের পর করবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁরা অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেননি কিংবা কোনো শিক্ষককে মারধরও করেননি।

আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, গত নির্বাচন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে সাবেক সংসদ সদস্যের ছবি দেয়ালে ঝোলানো ছিল। নির্বাচনের পর নতুন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিত্ব পেলেও তাঁর ছবি টানানো হয়নি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্যের অনুসারী হওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করা হয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।

ক্রীড়া অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করে দেখা যায়, প্রধান অতিথি হিসেবে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র মো. আনিছুর রহমানের নাম লেখা আছে। বরেণ্য অতিথি হিসেবে আছেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ হাসান মুকুল ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভূঁইয়ার। বিশেষ অতিথি শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পারুল খানম। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আমজাদ হোসেনের নাম লেখা।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট ছোট শিশুদের জন্য বছরে একটি ক্রীড়া অনুষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় শিশুরা কষ্ট পেয়েছে।’

শ্রীপুরের ইউএনও শোভন রাংসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি অভিযোগ পেয়েছি। এর আগে মৌখিকভাবে বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আমাকে জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলব।’