আমতলী থানা চত্বর থেকে জব্দ করা জাটকা লুট, জিডি করল পুলিশ
নৌবাহিনী ও উপজেলা মৎস্য বিভাগের যৌথ অভিযানে জব্দ করা জাটকা ইলিশ বরগুনার আমতলী থানা থেকে লুট হয়েছে। গতকাল বেলা তিনটার দিকে এমন ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সাগর ও নদীতে জাটকা ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে; কিন্তু তালতলী, কলাপাড়া ও আমতলী উপজেলার কয়েকজন জেলে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে অবাধে জাটকা ইলিশ শিকার করেছেন। এসব ইলিশ গতকাল দুপুরে চারটি গাড়িতে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নৌবাহিনীর সদস্য ও উপজেলা মৎস্য অভিযান চালিয়ে প্রায় দেড় হাজার কেজি জাটকা জব্দ করে। পরে জব্দ করা জাটকা আমতলী থানায় রাখা হয়। গতকাল বিকেলে এসব মাছ স্থানীয় ৫০টি এতিমখানায় বিতরণ করা হচ্ছিল। ওই সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ দুই শতাধিক মানুষ থানা চত্বরে ঢুকে মাছগুলো লুট করে নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, পুলিশের সামনে জাটকা ইলিশ লুট হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। রাজনৈতিক দলের লোকজন মাছ লুট করেছেন। উপজেলা প্রশাসন সঠিকভাবে মাছ বিতরণ করলে এমন হতো না। তাদের গাফিলতির কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার রাতেও জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়; কিন্তু উপজেলা প্রশাসন পরিবহন গাড়ি ও জব্দ করা মাছের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। ফলে থানায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী গাজী নাসির উদ্দিন বলেন, পুলিশের সামনে থেকে জব্দ করা জাটকা ইলিশ লুট হওয়া খুবই দুঃখজনক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। উপজেলা প্রশাসন সঠিকভাবে মাছ বণ্টন করলে এমন হতো না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমতলী উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার বলেন, ‘আমি প্রশিক্ষণে আছি। জব্দ করা দেড় হাজার কেজি মাছ ৫০টি এতিমখানায় বিতরণের সময় অজ্ঞাতপরিচয় শতাধিক ব্যক্তি থানা থেকে মাছগুলো লুট করেছেন।’
জাটকা ইলিশ লুট ঠেকানোর চেষ্টা করেও পারেননি বলে জানিয়েছেন আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান। তিনি বলেন, ‘জব্দ করা অর্ধেক মাছ সঠিকভাবে বণ্টন করা হয়েছে। বাকি অর্ধেক মাছ লোকজন নিয়ে গেছে। আমরা এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। মৎস্য বিভাগকে মামলা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। মামলার পর আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
ওসি আরও বলেন, ‘এখানে কারা মাছ লুট করতে এসেছেন, প্রায় সবাইকে আমরা চিনেছি, সিসিটিভি ফুটেজ আছে। তবে নাম প্রকাশ করতে চাই না। উপজেলা মৎস্য বিভাগকে এখানে মাছ আনতে দেওয়াটা উচিত হয়নি।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। থানা একটি সুরক্ষিত জায়গা, সেখান থেকে মাছ লুটের প্রশ্নই আসে না। তার পরও যদি লুট হয়ে থাকে, জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’